বিসিক শ্রমিকলীগ নেতা দুর্নীতিবাজ বেলাল এখনও বহাল তবিয়তে

স্টাফ রিপোর্টার :

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকে দেশের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসানো হচ্ছে ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের। তবে বিসিক কর্মচারী বেলাল, ফ্যাসিবাদের দোসর ও আওয়ামী সুবিধাভোগী, এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিষয়টিকে বিসিক শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করছেন সচেতন মহল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ বেশিরভাগ স্বৈরাচারীর হাত থেকে স্বাধীন হলেও বিসিক স্বাধীন হলো না। দোসররা বড় বড় চেয়ারে বসে আছেন। বিসিকের অনেক নির্যাতিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

বিসিকের মাফিয়া সিন্ডিকেটের গডফাদার বেলাল হোসেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদপুষ্ট ও আওয়ামী লীগের সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন রেজিঃ নং-বি-১৮১৩ (সিবিএ) ছিলো তৎকালীন শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত। ফ্যাসিবাদী শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ সহচর বেলাল। উচ্চমান সহকারী পদের একজন কর্মচারী তিনি; ক্ষমতা বলে দীর্ঘদিন যাবত পুরো বিসিকই তার পকেটে রেখেছেন।

০৫ আগস্টের পরেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই কর্মকর্তা। তার ইশারা ছাড়া বিসিকের কোন ধরণের কাজ হওয়া সম্ভব নয়। যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে কোন কাজ করে, তবে সেই কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ক্যারিয়ার শেষ না করে ক্ষ্যান্ত হবেন না তিনি, এমন অভিযোগ অনেকের কাছে আছে—ভুঁইফোড় সাংবাদিকসহ গুন্ডা বাহিনী।

আরও জানা গেছে, একজন সামান্য কর্মচারী হলেও বিসিকের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তার কথায় উঠবস করেন বিসিকের সর্বোচ্চ সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তাগণ। বিসিকের হিরো আলম খ্যাত ড. ফরহাদ আহমেদ, বোর্ড শাখার ম্যানেজার জীবন নাহার, লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন সহ বিসিকের পরিচালক প্রশাসন মো: খায়রুজ্জামান তার কথায় উঠবস করেন।

বেলাল হোসেন বিসিকে তার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রাখার জন্য যে সব অস্ত্র ব্যবহার করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো বেনামী অভিযোগ, প্রত্রিকায় নিউজ প্রকাশ, অসাধু সাংবাদিককে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করানো আর মামলার ভয় দেখানো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেলাল হোসেন বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে টার্গেট করে তার নামে বেনামী অভিযোগ, প্রত্রিকায় নিউজ প্রকাশ, সাংবাদিককে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করানোর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে চাদাবাজী করে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর এই চাদার টাকার ভাগ বাটোয়ারা হয় ড. ফরহাদ আহমেদ, বোর্ড শাখার ম্যানেজার জীবন নাহার, লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন সহ বিসিকের পরিচালক প্রশাসন মো: খায়রুজ্জামানদের মধ্যে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতিবাজ ড. ফরহাদ আহমেদ আর বিসিকের পরিচালক প্রশাসন মো: খায়রুজ্জামানকে ব্যবহার করে বেলাল হোসেন বিসিকে বদলী বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, পদোন্নতি বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, আউটসোর্সিং শ্রমিক নিয়োগ বানিজ্য, দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ বানিজ্য, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বানিজ্য, ফিজিবিলিটি স্টাডি বানিজ্য, শিল্পনগরী থেকে চাদা ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্ল্যাকমেইল করে চাদা আদায়সহ আরও নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বিসিকের অসাধু কর্মকর্তা।

ফলে কর্তৃপক্ষের যে কোনো সিদ্ধান্তসহ বোর্ড মিটিং, ডিপিসি মিটিংসহ যেকোনো মিটিং শেষ হওয়ার আগেই মিটিংয়ে কি আলোচনা হয়েছে সেই তথ্য চলে যায় বেলাল হোসেন এবং তাদের দোসর সাংবাদিকের কাছে। আর সেই তথ্যকে পুঁজি করে বানিজ্য করে বেলাল হোসেন। আর এই টাকার ভাগ বাটোয়ারা হয় ড. ফরহাদ আহমেদ, বোর্ড শাখার ম্যানেজার জীবন নাহার, লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন সহ বিসিকের পরিচালক প্রশাসন মো: খায়রুজ্জামানদের মধ্যে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বেলাল হোসেন সাম্প্রতিক সময়ে যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে টার্গেট করে হেনস্থা করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বিসিকের সাবেক পরিচালক অর্থ জনাব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, সাবেক পরিচালক প্রশাসন জনাব শ্যামলী নবী, সাবেক পরিচালক প্রশাসন জনাব মাহবুবুর রহমান, বর্তমান পরিচালক প্রকল্প জনাব আব্দুল মতিন, সাবেক পরিচালক প্ল্যানিং জনাব শফিকুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক জনাব অখিল রঞ্জন তরফদার, উপমহাব্যবস্থাপক জনাব রব্বানি তালুকদার, ম্যানেজার জনাব মেরাজ উদ্দিন, উপব্যবস্থাপক জনাব আসিফ উল হাসান, ডিসিএ বিল জনাব মারুফ হাসান, একাউন্টস অফিসার জনাব আরিফ আলমগীর, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জনাব আরিফ হোসেন, উচ্চমান সহকারী জনাব নাইম, উচ্চমান সহকারী সাইদুর রহমানসহ বিসিকের অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিসিকের সর্বোচ্চ সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তাগণের ছত্রছায়ায় জনাব বেলাল হোসেনের এই সিন্ডিকেট সম্পর্কে যথাযথ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিসিক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।

এবিষয়ে বেলাল হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করা হলে তিনি জানান, “আমি ট্রেড ইউনিয়নের সাথে ছিলাম; তখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, বাধ্য হয়ে তাদের কথা মতো ওঠাবসা করতে হচ্ছে। আর দূর্নীতি ও ব্ল্যাকমেইল বিষয়ে বলতে গেলে, একটি স্বার্থলোভী মহল বিসিকে অপকর্ম করতে পারে না বলে আমাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। অভিযোগগুলো মিথ্যা, আমি আওয়ামী লীগের সময় বিএনপি করি, তাই সাচমেন্ট ছিলাম। আমি বিএনপি পরিবারের লোক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *