সম্পদের

সামান্য পিয়ন পদে চাকরি করে কোটিপতি বনে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বাদশা মিয়াকে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।


👑 সামান্য পিয়ন, কিন্তু সম্পদের পাহাড়

 

জানা গেছে, পিয়ন বাদশার মূল পদবি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন হলেও, তার জীবনযাপন এবং সম্পদের পরিমাণ কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার চেয়ে কম নয়। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাজকর্মে সরাসরি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। দলিল লেখকদের জিম্মি করা, জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের এক বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।


🏰 রূপগঞ্জে আলিশান পাঁচতলা ভবন

 

যেখানে বাদশার বাবা দৈনিক মাত্র ৬০ টাকা বেতনের একজন ওমেদার হিসেবে কাজ করতেন, সেখানে পিয়ন বাদশা এখন রূপগঞ্জ এলাকায় একটি আলিশান পাঁচতলা বাড়ির মালিক। তার আয়ের উৎস ও সরকারি বেতনের সাথে এই বিপুল সম্পদের কোনো সামঞ্জস্য নেই। স্থানীয়দের মতে, তার এই বাড়িটি যেন দুর্নীতির টাকায় নির্মিত এক ‘প্রাসাদ’। এছাড়া, তার আরও বহু বেনামি সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।


🔍 অনুসন্ধানের দাবি এবং জনমনে ক্ষোভ

 

বাদশার এই আকাশচুম্বী সম্পদ এবং দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর নারায়ণগঞ্জ জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন সামান্য পিয়ন হয়ে কীভাবে বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে গেলেন, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিল না? এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহল।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মতো স্পর্শকাতর স্থানে পিয়ন বা ওমেদারদের কোটিপতি হয়ে ওঠার ঘটনাটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি বৃহত্তর দুর্নীতির সিন্ডিকেটের অংশ, যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকতে পারে। বাদশার মতো পিয়নরা আসলে পর্দার আড়ালে থাকা বড় দুর্নীতিবাজদের ‘ফ্রন্টম্যান’ হিসেবে কাজ করে বলে মনে করছেন অনেকে।


🚨 কর্তৃপক্ষের নীরবতা কেন?

 

এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাদশার দুর্নীতির এই ঘটনা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার অভাবকেই তুলে ধরে। অবিলম্বে এই দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে বাদশাসহ এই সিন্ডিকেটে জড়িত সকল অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি উঠেছে।

শেষ কথা: একজন ৬০ টাকা বেতনের ওমেদারের পুত্র কীভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি হতে পারেন, তা খতিয়ে দেখলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির চিত্রটি আরও স্পষ্ট হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *