স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ড. অলি আহমদ সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জড়িত ছিলেন। ড. অলি আহমদের এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফেরার মাত্র ১৭ দিনের মাথায় জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। তিনি দাবি করেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও এরশাদ প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার ভাষায়, “হাসিনা তো তখন পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তিনি ধরা পড়েন আখাউড়া সীমান্তে। আমরা সম্মানের খাতিরে বিষয়টি প্রকাশ করিনি।” এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, জিয়াউর রহমান হত্যার পর শেখ হাসিনা ও সাজেদা চৌধুরীকে সীমান্তে আটক করা হয়েছিল।
শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ড. অলি বলেন, “তাদের হত্যার পর বাংলাদেশে মিষ্টি বিতরণ করা হয়, মানুষ আনন্দ করেছে—কারণ তারা মনে করেছিল, নমরুদের হাত থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে। শেখ মুজিবুরের পরিবার ছিল দেশের জন্য ধ্বংসের পরিবার, পরবর্তীতে শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডেই তা প্রমাণিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিব ছিলেন সর্বেসর্বা, সামরিক বাহিনী তখন দুর্বল ছিল, তাই কেউ কিছু করতে পারেনি।”
অলি আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় জার্মানিতে ছিলেন, পরে হুমায়ূন রশীদের সহায়তায় ভারতে যান এবং সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার মাত্র ১৭ দিনের মাথায় ঘটে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড। তার দাবি, এর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাবও ছিল এবং এরশাদও এতে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জনগণের জন্য যুদ্ধ করেছি, ভারতের অঙ্গরাজ্য হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগের হয়ে ভারতের দালাল হিসেবে কাজ করছিলেন। যার পরিণতি হয় শেখ মুজিবের পরিবারের মতোই।”
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস নিয়ে তিনি বলেন, “১৫ আগস্টের ঘটনার পর জিয়া কারাগারে ছিলেন, তিনি কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন না। মোস্তাক সরকার সামরিক শাসন জারি করে দেশকে অস্থিতিশীল করেছিল, যার দায়ে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এতে জিয়ার কোনো ভূমিকা ছিল না।”
ড. অলি আহমদের এসব মন্তব্য রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিবেচিত হচ্ছে। ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের বক্তব্যে দেশের অতীত রাজনৈতিক ঘটনাগুলো নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তবে এসব বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মতামত এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই কিংবা সরকারি তদন্তের কোনো আনুষ্ঠানিক নথি এখনও পাওয়া যায়নি।