মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী, ব্যুরো চিফ:
নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী রেফার্ডের নামে হয়রানি ও চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এবার সেই অনিয়ম রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) থেকে জেলার ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ও খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালসহ সকল সরকারি হাসপাতালে রোগী রেফার্ড সম্পর্কে স্বচ্ছ তথ্য তুলে ধরতে আলাদা তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হবে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক বলেন,
“অসংখ্য অভিযোগ আমরা পেয়েছি যে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালগুলো অযথা রোগী রেফার্ড করছে, যা রোগীদের চরম দুর্ভোগে ফেলছে। এ ব্যাপারে আমরা স্বচ্ছতা আনতে চাই। তাই কাল থেকেই প্রতিটি হাসপাতালে একটি তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হবে, যেখানে প্রতিদিনকার ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা, রেফার্ড রোগীর সংখ্যা এবং কেন রেফার্ড করা হয়েছে—তা উল্লেখ থাকবে। এতে রোগী পক্ষ যেমন জানবে, তেমনি এই তথ্য প্রকাশ্য হওয়ায় জবাবদিহিতা বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন,
“হাসপাতালগুলো মূলত দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য। সক্ষম চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যদি রোগীকে অন্যত্র পাঠানো হয়, তা শুধু অমানবিকই নয়, এটি দায়িত্ব অবহেলা। তাই এই রেফার্ডের নামে অব্যবস্থা বন্ধে আমরা কাজ করছি।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সংবাদচর্চা’ ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘নারায়ণগঞ্জ প্রেস’ একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসা অনিয়ম ও রোগী রেফার্ডের অপব্যবহারের কথা তুলে ধরে। এসব প্রতিবেদন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন—“নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে”—তে অভিযোগ ছিল, চিকিৎসকরা সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ইচ্ছামতো রেফার করে দিচ্ছেন।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আরেক প্রতিবেদনে—“নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে ডাক্তারদের এ কেমন আচরণ!”—শিরোনামে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জনের দপ্তর প্রথমে বিষয়গুলো অস্বীকার করলেও পরবর্তী তদন্তে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পায়। পরে র্যাবের অভিযানে জনমনে কিছুটা স্বস্তি এলেও, মূল সমস্যা থেকে যায় অমীমাংসিত।
জানতে চাইলে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের এক রোগীর স্বজন বলেন,
“চিকিৎসা দিতে না পেরে হঠাৎ করে রেফার্ড করে দেওয়ায় আমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যত্র পাঠানোর সময় কোনো নির্দেশনাও দেয় না, যার ফলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়।”
অবশেষে জেলা প্রশাসকের এই নতুন উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে আবারও আশা তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সঠিকভাবে এই তথ্য বোর্ডগুলো কার্যকর হলে রোগী রেফার্ড সংক্রান্ত স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস পাবে এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রকৃত অর্থে ‘জনসেবার’ মনোভাব ফিরে আসবে।