তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি সেহরি-ইফতারেও লোডশেডিং

মিজানুর রহমান:

ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে তিনটার ঘরে।বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের এ সময়ে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন খুলশী জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন সাগর। হঠাৎ চলে যায় বিদ্যুৎ। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও বিদ্যুৎ না আসায় শেষ পর্যন্ত চার্জ লাইটের আলোয় সেহ্রি সারেন এই বেসরকারি চাকরিজীবী।

 

গত বুধবার থেকে এভাবে সেহরির সময় শুধু নয়- দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে চট্টগ্রামে। এমনকি ইফতারেও মিলছে না বিদ্যুৎ। পবিত্র রমজানে তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় একদিকে যেমন রোজাদারদের দুর্ভোগ বেড়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যও।

 

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। বিপরীতে আইপিপি কেন্দ্রে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ মিলছে ১২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ মিলছে কম।

 

গতকাল বুধবার দিনে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি। বিপরীতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ মিলেছে ৮৫০ মেগাওয়াট। এদিন চট্টগ্রামে লোডশেডিং ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। রাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। লোডশেডিং ৩০০ থেকে কমে ১৫০ মেগাওয়াটে নেমে আসে।

 

দিনে ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং থাকায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা ভেঙে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৭-৮ বার লোডশেডিং দেওয়া হয়। শহরে কয়েক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ মিললেও দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ।

 

জানতে চাইলে সরাইপাড়া লোহার পোল আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, রমজানে লোডশেডিং হলেও সেহ্রি-ইফতারের সময় অন্তত বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এবার সেটিও পাচ্ছি না। বুধবার সারাদিনে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এই রমজানে তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকা কষ্টের।

 

নগরীর নিউ শহীদ লেইন এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরেও ভয়াবহ এই লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায় না। চট্টগ্রামের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অথচ গ্রিড থেকে দেওয়া হচ্ছে অর্ধেক। এটা চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ।

 

গরমের শুরুতেই লোডশেডিং বাড়ায় শুধু আবাসিক নয়- ক্ষুব্দ শিল্প-বাণিজ্য শ্রেণির গ্রাহকেরাও। বিশেষ করে ঈদ বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ব্যবসা বাঁচাতে ঈদ পর্যন্ত আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই।

 

টেরিবাজারের ব্যবসায়ী মো. ইসমাঈল জানান, এখন ব্যবসার ভরা মৌসুম। এ সময়ে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এসি না চললে ক্রেতারা আসতে চান না। দিনে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসি চালানো দূরের কথা- ফ্যানও চালানো যাচ্ছে না। এতে ক্রেতারা দোকান বিমুখ হচ্ছেন। ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।

 

চট্টগ্রামে লোডশেডিং বাড়ার কথা স্বীকার করে পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, গরমের কারণে এসির ব্যবসার বেড়েছে। যে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে এটি সাময়িক।

 

তবে পিডির্বির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিপুল বকেয়া থাকায় আইপিপি কেন্দ্রগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে মোট উৎপাদন কমে গেছে। ঈদের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। আপাতত বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে পিডিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *