ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ বাবা বিদেশে, মা-ছোট বোনটাও চলে গেল না ফেরার দেশে

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে হারিয়েছেন সৌদি প্রবাসী মিল্টন শেখ (৩৬)। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ জনের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন তার স্ত্রী সোনিয়া বেগম ও শিশুকন্যা নুরানি আক্তারও।

মিল্টন শেখ আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেজিডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জীবিকার তাগিদে এক বছর আগে অবৈধভাবে সৌদি আরবে পাড়ি দেন।

মিল্টনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিল্টন শেখ ও সোনিয়া দম্পতির আরও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে মিলি (১৪) বেজিডাঙ্গা কাজী আমেনা ওয়াহেদ উচ্চবিদ্যালয়েরে নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে মিনা (১০) স্থানীয় বেজিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। দুর্ঘটনায় মা ও ছোট বোনকে হারিয়ে তাদের এখন পাগলপ্রায় অবস্থা। বাবা বিদেশে, মা ও ছোট বোনটাও চলে গেল না ফেরার দেশে- এটা যেন দুই বোন কিছুতেই মানতে পারছে না।

মিল্টনের বড় ভাই তৈয়ব শেখ বলেন, এমন দুর্ঘটনার কথা কীভাবে ছোট ভাইকে জানাব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তবুও বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে ভাইকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছি। আমারই জানাতে বুক ফেটে যাচ্ছিল। জানি না আমার ভাইয়ের কত কষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা শোনার পর আমার ভাই কতক্ষণ কোনো কথাই বলতে পারেনি, স্তব্ধ হয়ে ছিল। ও অবৈধভাবে বিদেশে আছে বলে ইচ্ছে হলেই দেশে আসতে পারবে না। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি ওকে যেন আল্লাহ এই শোকটা সইবার ক্ষমতা দেয়।

মিল্টনের ছোট মেয়ে মিনা বলে, আমরা এখন এতিম হয়ে গেলাম। আমার মা দুনিয়া থেকে চলে গেল, বাবাও কাছে নেই। আদরের বোনটাও চলে গেল। বোনটাকে আমরা বড় দুই বোন কোলে নিয়ে বেড়াইতাম। মায়ের সাথে ওকেও কবরে রেখে এসেছে। বোন আর মাকে জীবনে দেখতে পারব না ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসছে।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, মিল্টনের পরিবার খুব দরিদ্র। তাদের বসতবাড়িতে একটি চৌচালা টিনের ঘর ছাড়া তেমন কোনো সম্পত্তি নেই। নিহত সোনিয়া ও তার মেয়ের মরদেহ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পশ্চিম পাশে দাফন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *