
স্টাফ রিপোর্টার :
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে বানিজ্যের অভিযোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।
এর আগে গত রবিবার বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
গতকাল শুক্রবার (২৪ মে) নিয়োগ পরীক্ষায় তিনপদের কর্মচারী নিয়োগে দুইপদের প্রার্থীদের অনুপস্থিত দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) এএসএম শাহাদাত হোসেনে নেতৃত্বে তিনটি পদের দুই পদের প্রার্থীরা অনুপস্থিত থাকায় একটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে।
নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, পরিচ্ছন্নকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার (২৪ মে) সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দিন ধার্য্য করা হয়। তিনপদের মধ্যে ল্যাব সহকারীতে ৪জন, পরিচ্ছতাকর্মীতে ৪জন ও আয়া পদে ১৩জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠেছে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ৬, আয়া ১,পরিচ্ছন্নকর্মী ৩ অনিয়মের মধ্যপ দিয়ে অবৈধ্য ঘোষনা দিয়ে প্রবেশ পত্র দেয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে কয়েকজন প্রার্থীদের নিকট থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। চাহিদানুযায়ী অর্থ না পাওয়ায় কয়েকজন প্রার্থীর থেকে নেওয়া অর্থও ফেরত দেন তারা।নতুন কমিটি জন্য ইতিমধ্যেই তফসীল ঘোষণা করা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে মোটা অংকের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগে প্রার্থী পাল্টানোর জন্য ২০২৩ সাল থেকে পরপর তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, পূর্বে যারা আবেদন করেছেন পুনরায় তাদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তারপরও কয়েকজন নিয়োগ প্রার্থী প্রবেশপত্র পায়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য সভাপতি-প্রধান শিক্ষক যাতে করতে না পারেন সেজন্য নিয়োগ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ ৮জন ব্যক্তি। তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমীন ইয়াসমিনকে দায়িত্ব দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুধবার বিকেলে উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানি শেষে জেলা প্রশাসককে জানানোর পর নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মো. শাহাদাত হোসেনকে দায়িত্ব দেন।
গতকাল শুক্রবার (২৪মে) পরীক্ষা চলাকালীন বিদ্যালয় চত্বর ঘুরে দেখা যায়, নিয়োগ পরীক্ষায় তিনপদের মধ্যে ল্যাব সহকারীতে ৪জন, পরিচ্ছতাকর্মীতে ৪জন ও আয়া পদে ১৩জন পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র পেলেও আয়া পদের ৮জন ও পরিচ্ছতাকর্মী ২জন বাদে ল্যাব সহকারীতে কেউ উপস্থিত হয়নি। নিয়োগে বৈধতা থাকতে প্রত্যেক পদে কমপক্ষে তিন পরীক্ষার্থী থাকা প্রয়োজন। সেখানে আয়া পদে ৮জন প্রার্থী ও পরিচ্ছতাকর্মী পদে দুইজন প্রার্থী হাজিরায় স্বাক্ষর করেন এবং ল্যাব সহকারী পদে সবাই অনুপস্থিত। নিয়মানুযায়ী আয়া পদের ৮জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে লিখিত পরীক্ষা ১২টায় শেষ হয়। ৮জনের মধ্যে তিনজন লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হন। তিনজনের মৌখিক পরীক্ষা শেষে বেলা ২টায় ডলি খানম নামে একজন প্রার্থী বেশি মার্ক পাওয়ায় তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন নিয়োগ কমিটি। পরিপত্র অনুযায়ী কাঙ্খিত পরীক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় ল্যাব সহকারী ও পরিচ্ছনতাকর্মী পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আরব আলী ও শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন সদস্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ দেওয়ায় নিয়োগে দিন আমাদের মৌখিক দাওয়াতও দেননি তারা। নিয়োগে যে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দুর্নীতি করার পায়তারা করছিল। সেটার প্রমান তিনপদের মধ্যে দুইপদেই পরীক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়নি। তবে জানতে পেরেছি, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এনডিসির নেতৃত্বে আয়া পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। স্কুলের কর্মচারী নিয়োগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা করায় জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিয়োগ বিধি মেনেই আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই পদে ১৩জন প্রার্থীর মধ্যে ৮জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় ৩জন উত্তীর্ণ হন। তিনজনের মধ্যে ডলি খানম নামে এক পরীক্ষার্থী সবোর্চ বেশি নম্বর পাওয়ায় তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন নিয়োগ কমিটি। তিনটি পদের মধ্যে পরিপত্র অনুযায়ী কাঙ্খিত পরীক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় ল্যাব সহকারী ও পরিচ্ছনতাকর্মী পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার দেখা মতে এর চেয়ে আর স্বচ্ছ নিয়োগ হতে পারে না। আমি যতদিন এই স্কুলে আছি কোন নিয়োগ থাকলে এ রকমই স্বচ্ছ নিয়োগ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) এ এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, তিনটি পদের মধ্যে একটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুইটি পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় পদ দুইটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ও ২৩ মে বুধবার আলফাডাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নিউজ পোটালে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।