নাছিমা খাতুন সুলতানা:
নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায় গরুর খামারে সংঘটিত এক দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলার কাইটাল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি ও কেশজানি গ্রামের মৃত তারাবত খান পাঠানের ছেলে মোঃ জামাল খান পাঠানের মালিকানাধীন গরুর খামার থেকে একাধিক গরু ও নগদ টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখ দিবাগত রাতে খামার থেকে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। ভোরে খবর পেয়ে খামারে ছুটে গেলে মালিক জামাল মিয়া দেখতে পান, খামারের সব গরু উধাও—এমনকি ম্যানেজার ও কর্মচারীরাও খামারে উপস্থিত নেই। খামারের ম্যানেজারের বাড়িতে গিয়ে প্রশ্ন করলে সেও কোন সঠিক জবাব দিতে পারেনি। এ ঘটনার পর জামাল মিয়া চারদিক খুঁজতে শুরু করেন।
ঘটনার কয়েকদিন পর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, চুরি হওয়া গরুগুলো পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার গরুর বাজারে বিক্রি করার চেষ্টা করছে ম্যানেজার ও দুই কর্মচারী। খামারের মালিক ও তার সহযোগীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের হাতে-নাতে গরুসহ ধরে ফেলেন। পরে তিনজনকে গরুসহ এলাকায় ফিরিয়ে আনার সময় তেলিগাতি বাজারে পৌঁছালে তারা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জনতার সহযোগিতায় তিনজনকেই ধরা হয়।
এ ঘটনায় গরুর খামারের মালিক ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি মোঃ জামাল মিয়া বাদী হয়ে মদন থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে—
১. মোঃ হানিফ মিয়া
২. মোঃ শাজাহান মিয়া
৩. মোঃ হেলিম উদ্দিন।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা মালিকের স্ত্রী মোছাঃ স্বপ্না আক্তার, স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সোহেল মিয়া ও বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন। সবাই জানান, দীর্ঘদিন ধরে জামাল মিয়া গরুর খামারের ব্যবসা করে আসছেন এবং আসামিরা ছিল তার অত্যন্ত বিশ্বাসী লোক। সেই বিশ্বাসের সুযোগেই মালিকের অনুপস্থিতিতে গরুগুলো চুরি করে পালিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চোর ধরা পড়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা দাবি করেন, এই চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।
এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবদুল্লা মিয়া, মোঃ জাসিম মিয়া, মোঃ আজিজুল ইসলাম, মোঃ সোহেল মিয়া, মোঃ আনিছ মিয়া, মোঃ জহিরুল মিয়া, মোঃ সোহাগ মিয়া, মোঃ শাহিন মিয়া, মোঃ আয়নাল হক, মোঃ কবির মিয়া, মোঃ মজু মিয়া প্রমুখ জানান, “আমরা এই ধরনের চুরির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ আশা করছি।”
এ বিষয়ে মদন থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকেও ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই চুরির ঘটনায় পুরো কাইটাল ইউনিয়নে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।