স্টাফ রিপোর্টার:
জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড ফার্ম (কোম্পানি) নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা হারুন-অর-রশিদ সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে, যে তিনি অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, হারুন-অর-রশিদ বর্তমানে ঢাকায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন।
তথ্য অনুযায়ী, হারুন ১৯৯২ সালে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান, তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তার পদোন্নতি ও অফিসে উন্নতির প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলেও পদোন্নতির প্রক্রিয়া তাতে কোনো বাধা হয়ে ওঠেনি। দুদকের অনুসন্ধান (ঢাকার নথি নং-০৪.০১.০০০০.৬২১.২৬.০০৫.১৮(অংশ-৫).৬২৬২৩) অনুযায়ী, হারুন নিজেকে প্রথমে ‘আওয়ামী আমলের বঞ্চিত কর্মকর্তা’ হিসেবে সাজিয়ে নেন।
এরপর পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করে নিজের পদোন্নতি নিশ্চিত করেন। পদোন্নতির জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দফতর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছিলেন। পদোন্নতি ও আর্থিক লেনদেন: তথ্য অনুযায়ী, হারুন প্রথমে ‘উচ্চমান সহকারী ও এক্সামিনার অ্যাকাউন্টস’ পদে পদোন্নতি পান।
যদিও পদোন্নতি কমিটি তাকে ‘ইন্সপেক্টর’ হিসেবে সুপারিশ করেছিল, পদোন্নতির চিঠি ইস্যু হয় ‘এক্সামিনার’ হিসেবে। এই পদোন্নতির জন্য হারুন ২০০৯ সালের দিকে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জালিয়াতি ও অর্থ লগ্নি করেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে উন্নীত হন। পরপর পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ে নিয়োগের মাধ্যমে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হন। নিম্ন বেতনভোগী কেরানী পদে থাকা সত্ত্বেও তার সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
সম্পদের পাহাড়: হারুন-অর-রশিদের বৈধতার বাইরে থাকা সম্পদের মধ্যে রয়েছে: খুলনার টুটপাড়ায় একটি বাড়ি, একই শহরের বসুপাড়ায় একটি বাড়ি, রাজধানীর মিরপুর থানার পেছনে ৬২, বড়বাগ শেল কোম্পানির ১ নম্বর ভবনের ৪র্থ তলায় কয়েক কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর ডিওএইচএস ফ্ল্যাট, মেয়ের নামে, নিকটাত্মীয়দের নামে বিপুল অবৈধ অর্থ-সম্পদ ও নিজ জেলা যশোরেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি।
জয়েন্ট স্টকের কর্মকালীন সময়ে নতুন কোম্পানি নিবন্ধন বা নবায়ন সংক্রান্ত নথি নিজের স্ত্রীর নামে পরিচালিত ফার্মে নিয়ে গিয়ে সুবিধা দিতেন। প্রশাসনিক প্রভাব ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ: হারুনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত¥সাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়।
তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে তিনি পদোন্নতি পান। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত ফাইল কমিশনের সভায় ওঠে, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তবে হারুন এক বছর ধরে অনুসন্ধান থামিয়ে রাখতে সক্ষম হন। ২০২১ সালে তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক মো: শহীদুল ইসলাম মোড়ল রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন এবং হারুনের চাকরিকালীন বেতন-ভাতার তথ্য চাইলে অনুসন্ধান ফের স্থগিত করা হয়।
রাজনৈতিক প্রভাব: ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে হারুন নিজেকে ‘বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। জয়েন্ট স্টকের তৎকালীন মহাপরিচালক মো: মিজানুর রহমান এনডিসিকে হাত করে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুদকের কাছে এসএসবি ক্লিয়ারেন্স চেয়ে পাঠালেও, হারুন আগেই লাইন-ঘাট ম্যানেজ করে পদোন্নতি অর্জন করেন। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী মো: আনিসুজ্জামান খানের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরেকটি তদন্ত শুরু করলেও হারুন প্রশাসনিক প্রভাব ও লবিংয়ের মাধ্যমে দায়মুক্তি পান।
হারুন-অর-রশিদ নামের এই কর্মকর্তা নিয়োগের পর থেকে ধাপদর্পে পদোন্নতি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতিমূলক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে থেকেও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে এবং সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির অপেক্ষা রয়েছে।
তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানে স্পষ্ট, এই কর্মকর্তা সরকারি পদ ও জনস্বার্থের দায়িত্বের অপব্যবহার করে নিজের বৈষম্য ও আর্থিক স্বার্থে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন।