আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল (ভূমি) অফিসে ঘুস ছাড়া সেবা মেলে না

স্টাফ রিপোর্টার :

সাভারের আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। জমির নামজারি, খারিজ, জমাভাগসহ যেকোনো ভূমিসেবা নিতে চরম হয়রানি ও ঘুষের শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যক্রম পরিচালনায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন কানুনগো হাবিবুল্লাহ।কানুনগোর ছত্রছায়ায় রয়ছে তার নিজুক্ত কম্পিউটার ম্যান খোকন মিয়া, পলাশবাড়ী ভূমি অফিসের সকল লাইন ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। খোকনকে টাকা উঠাতে সহযোগিতা করে পাইটু সাহাদাত, সাঈদুল, সহ আরো কয়েজন দালাল। টাকা উঠিয়ে খোকনের কাছে জমা দেয় এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সাম্প্রতি পত্রিকায় উক্ত বিষয় খবর প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে দূর্নীতিবাজরা ভূমি কতৃপক্ষের লোকজন তদন্ত করে সত্যতা পায়। খোকন কিছুটা গা ঢাকা দিলেও তার কর্মকাণ্ড থেমে নেই। খোকন প্রতিদিন খুব সকালে অফিসের ৪ তলায় একটি গোপন কক্ষে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছে প্রত্যাক্ষদর্শীরা। সে অফিস শেষে সন্ধার পর আবার মাস্ক পরে বের হয়ে যায়। অফিসের এক ক্ষুব্ধ কর্মচারী নাম না বলার সর্তে প্রতিবেককে বলেন খোকন প্রতি বৃহস্পতিবার কানুনগো হাবিবুল্লাহর কাছে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া ঘুসের টাকা জমা দিলে এসিল্যান্ডসহ হিস্যা অনুযায়ী সকলকে বন্টন করে দেন।

ভুক্তভোগী আব্দুল আলি জানান মামলা নং ১৫১২১ শুনানির জন্য জমির মূল দলিল নিয়ে ২২/৫ তারিখে হাজির হওয়ার পর অফিসের কানুনগোর নাম দিয়ে তার নিজুক্ত দালালরা ফোন করে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় সমস্ত কাগজ পত্র সঠিক থাকা সত্যেও নামজারী না মন্জুর করে দেয়। এছাড়াও একই অভিযোগ করেন তানিয়া, মামলা নং ১৪৮২৬, নাজিমউদ্দীন, মামলা নং ১৫৩১৯, ও ১৫৩২৩, জান্নাতুল ফারিয়া, মামলা নং ১৪৭০৫, আব্দুল আলী, মামলা নং ১৫০০২, ফাতিমা আক্তার, মামলা নং ১৫৩১৬, সহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

কসাইখ্যাত পেশকার সাহাব উদ্দিন শিহাবের বিরুদ্ধে মিসকেছ নিয়ে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ। মিসকেচে ৫০ হাজার টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ঘুস বানিজ্য করে বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ভাদাইলের পাবনার টেকের আলেকুজ্জামান বলেন আমার গনকবাড়ি মোজার জমি ভুয়া দলিল দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে খারিজ করে নেয় একটি চক্র । এদের বিরুদ্ধে ২৫/২৩ একটি মিসকেছ দায়ের করি। উক্ত মামলাটি আমার পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য পেশকার সাহাব উদ্দিন আমার নিকট ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত মামলাটি ঝুলিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকজন এসিল্যান্ড বদলি হয়ে গেছে। বর্তমান এসিল্যান্ড ছাদিয়া আক্তার সমস্ত কাগজ সঠিক থাকা সত্যেও আমার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেন নাই। আমার পৌতৃক সম্পত্তির মোটা অংকের টাকা না দেওয়ায় আমি সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হলাম।
নাজির সোহানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কমচারী মিলে এ ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে দেওয়া হয়, হয়রানি করা হয়, এমনকি মিথ্যা অজুহাতে নামজারি বা খারিজ না-মঞ্জুর করে দেওয়া হয়। আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিলে জাল দলিলেও হয় খাজনা-খারিজ, অথবা জবরদখল উল্লেখিত পর্চায় নামজারি কিংবা দলিলের দাগ ওভার রাইটিং বা পরিবর্তন করে নামজারি করে দেওয়ার মতো সব কাজ।

অন্যদিকে দালাল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেছে অফিসের নাইটগার্ড মানিক ও এসিল্যান্ডের ড্রাইভার, জানা গেছে,মানিক অল্পদিনেই সাভার এলাকায় নিজস্ব জায়গা কিনে গড়ে তুলেছেন ভবন। মানিক নাইটগার্ড হলেও পরিচয় দেন অফিস সহকারী। মূলত তিনি দালাল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।

একটি কল রেকর্ডে ঘুষের হারও নির্ধারিত থাকতে শোনা গেছে—নরমাল খারিজ ৩,০০০ টাকা, এলএ কেস ৭/৮ হাজার, বিআরএস খাস ১৪/১৫ হাজার, এবং এসএ পাট খাস ১৭/১৮ হাজার টাকা। এ নিয়ম পূর্বের এসিল্যান্ডের সময়ে নির্ধারিত হয়েছে, বর্তমান এসিল্যান্ড এখান থেকে এক টাকাও কমাতে পারবে না।
এছাড়া ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এসিল্যান্ড সাদিয়া আক্তার জয়েন্ট করার পর আশুলিয়ার শিমুলিয়া ভুমি অফিস ও ঘোড়াপীর ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। যে যেমন ভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছে। ভূমি কর্মকর্তা কর্মচারীরা তার আদেশ মানছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, অবিলম্বে এই ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সরেজমিনে তদন্ত করে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। একই সাথে, ভূমি সেবা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই তাদের ন্যায্য সেবা পেতে পারে।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আকতার মুঠোফোনে বলেন, খাজনা-খারিজের কোনো রেটের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর আমার এখানে কোনো রেটও নেওয়া হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *