স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকার ‘ওয়ান স্টার’ হোটেল—যা আকবর টাওয়ারের নিচতলায় অবস্থিত—সেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে চলছে মাদক সেবন, জুয়া ও দেহব্যবসার মতো অপরাধ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব অসামাজিক কার্যকলাপে প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে, ফলে অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে।
হোটেলের গেটের সামনে এসি/নন-এসি সুবিধাসহ “বিশ্রামের” বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দেওয়া থাকে একটি বা একাধিক মোবাইল নম্বর, ছোট্ট করে হোটেল কক্ষের ছবি, গোলাপফুল বা কখনো কোনো নারীর ছবি—যা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বলে ধারণা। কিন্তু কোথাও হোটেলের পূর্ণ ঠিকানা থাকে না। শুধু লেখা থাকে ‘উত্তরা’ বা ‘আব্দুল্লাহপুর’। অনেক কার্ডে লেখা থাকে—“আসার আগে ফোন দিন”।
একটি নম্বরে ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে নির্দেশনা আসে—“আব্দুল্লাহপুর চলে আসেন”। সেখানে পৌঁছালে এক ব্যক্তি জানালা দিয়ে ইশারা করে লোকজনকে হোটেলটিতে নিয়ে যায়। এরপর ঘিরে ধরে একদল যুবক। উপরে নেওয়ার পর শুরু হয় “বয়স” অনুসারে মেয়ের পছন্দ করার প্রস্তাব। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া বা বিভিন্ন জেলার মেয়েদের সরবরাহের অফার দেওয়া হয়। প্রতি ঘন্টার জন্য চার-পাঁচ হাজার টাকা, চাইলে সারারাত থাকার ব্যবস্থাও!
প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন—এইসব অসামাজিক কার্যকলাপ এত প্রকাশ্যে কীভাবে চলে? কেউ বাধা দেয় না? উত্তর আসে—“বড় ভাই আছে না!” তবে ওই ‘বড় ভাই’-এর নাম তারা কেউ বলেনি। তাদের ভাষ্যমতে, প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করেই ব্যবসা চলছে।
কার্ডে কখনোই ‘ভাই’-দের আসল নাম থাকে না। অধিকাংশই যৌনকর্মীদের দালাল হিসেবে কাজ করেন। কখনো হোটেলে, কখনো বাসায় সরবরাহ দেন। কার্ডে ঠিকানা না থাকার কারণ হিসেবে বলেন, “ঠিকানার দরকার পড়ে না, আমরা কাস্টমারকে নিয়েই যাই।”
প্রতিদিন শত শত কার্ড ওভারব্রিজের গায়ে লাগানো হয়। এই কাজে ১০–১৫ বছরের কিশোররাও যুক্ত। কেউ কেউ দিনে ৪–৫শ টাকা উপার্জন করে এইভাবে। সমস্যায় পড়লে তাদের ‘বড় ভাই’-রাই নিরাপত্তা দেয়।
কার্ডে যাদের নাম বা ফোন নম্বর থাকে, তারা মূলত দালাল। আর তাদের পেছনে রয়েছেন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা প্রকৃত হোতারা। এলাকাবাসীর দাবি, এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা রাজিব নামের এক ব্যক্তি।
তবে প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অভিযান বা অবস্থান এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই অপরাধ সাম্রাজ্যের পেছনে আসল ‘খুঁটি’ কারা?