কালীগঞ্জের ৩৫০০ জন মুসলিন কটন মিল শ্রমিকরা ৩১ বছরেও ৩৫০০ শ্রমিক কষ্টার্জিত পাওনা বকেয়া টাকা পাননি ।

কালিগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি;

এশিয়ার বৃহত্তম মুসলিন কটন মিলটি স্থাপিত হয় ১৯৫২ সালে। ১৯৬৮ সালে ই পি আই ডি সি গভারমেন্ট মিলটি কে বিক্রি করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয় মিলটিকে। সরকারি ভাবে স্পেলিং ডাইং রিং তিনটি ইউনিট চালু করে। ১৯৮২ সালে পুনরায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গুল বুক্স ভূঁইয়ার কাছে বিরাষ্ট্রীয়করণ করে বিক্রি করে দেন তৎকালীন সরকার। লাভজনক এত বড় মিলটি চলন্ত অবস্থায় ১৯৯০ সালে বন্ধকরে দেন মালিক পক্ষ।

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯২ সালে জানুয়ারি মাসে মিলটি চালু করেন। মাত্র সাত মাস চলার পরে শ্রমিকের পূর্বের বকেয়া এবং সাত মাসের বেতন না দিয়ে মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দিন মালিকপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে সরকারের বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয় মিলটিকে টেইক ব্যাক করেন।
শত আন্দোলনের পরেও শ্রমিকের কোন ব্যবস্থা নেয় নাই সরকার । অধ্যহারে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় ভিক্ষা ভিত্তি করে রিক্সা চালিয়ে অনেক শ্রমিক মারা যায়।

গত সরকার শেখ হাসিনার আমলে কিছু স্বার্থনাশি মহলের দুর্নীতিবাজদের চক্রান্তের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পদ নামে মাত্র মুল্যে বিক্রি করার চুক্তিতে ০১/০৮/ ২০১৩ সালে চুক্তিনামা দলিলের মাধ্যমে সরকার পক্ষ ও হামিম গ্রুপ এর রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেটের সাথে সাক্ষ্য করেন। মিলের শ্রমিকের পাওনা, ব্যাংকের ঋণ,বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, করার দায়িত্ব নিয়ে রিফাত গার্মেন্টস লিঃ সরকারের নিকট থেকে মিলটিকে ক্রয় করেন। হামিম গ্রুপ রিফাত গার্মেন্টস লিঃ ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৩২৮ শ্রমিককে টাকা পরিশোধ করে জন্য পরিশোধের ও চাবি হস্তান্তরের অনুষ্ঠান করেন। অনুষ্ঠানে রিফাত গার্মেন্টস লিঃ ও তৎকালীন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় এমপি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তাবৃন্দ উপস্থিত হয়ে মিলের ৩২৮ জনের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন এবং মিলের চাবি হামিম গ্রুপ রিফাত গার্মেন্টস লিঃ গ্রহণ করেন।

৩২৮ শ্রমিকের পরে বাকি পাওনা বকেয়া টাকা দিয়ে দিচ্ছি করে আজ অব্দি দেয়নাই। অন্যদিকে চাবি পেয়ে মিলে থাকো স্থাপনা,মেশিন মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, আসবা পত্র, যন্ত্রাংশ কোটি কোটি টাকার মালামাল হামিম গ্রুপ রিফাত গার্মেন্টস লিঃ বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রাপ্ত হন। স্থানীয়রা বলেন মুসলিম কটন মিলের মোট সম্পত্তি জমি ৮৪৯৫ শতাংশ। মিলের ভিতরে ও বাহিরে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ এবং জমির তখনকার বাজার ধরে মূল্য হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উপরে হবে মনে করে শ্রমিকরা। যাহা মূল্য ধরা হয় মাত্র ১৩৫ কোটি টাকা।
গত সরকারের শেষ সময় ২০২৩ শে ২১ নভেম্বর মিলটির সমুদয় জমি, কলকারখানা, বিল্ডিং, আসবাবপত্র কেমিকের মিলের মালপত্র সহ সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে মিলটি বিক্রি সম্পুর্ণ হয় যাহার দললিল নং১২৫৫৫ তাং২১/১১/২০২৩ইং। কালীগঞ্জের শ্রমিক ও এলাকাবাসীর কাছে মনে হয় এত কম দামে কোন ভাবেই মিলটি বিক্রি গ্রহণযোগ্য মনে হয় নাই।

মুসলিম কটন মিলের শ্রমিক নেতা ইউসুফ বলেন আমরা দফায় দফায় সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম ও স্থানীয় এমপি চুমকির সাথে বসেছি। যতবার বসেছি তারা পাওনা টাকা পরিশোধ করে দিবে বলেন কিন্তু তারা সমঝোতার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যান এবং টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে নাই। এতে করে আমাদের শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে কষ্ট সহ্য করে বিনা চিকিৎসায় অভাবে অনেক শ্রম বরণ করেন যারা জীবিত আছে তারা মানবতার জীবন জাপন করছেন বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে আমাদেরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন। শ্রমিক নেতা বেলায়াত হোসেন বলেন আমরা হামিম গ্রুপের মালিকের সাথে বারবার বসেছি আমাদেরকে না জানিয়ে তিনি দিকে সকল শর্ত ভঙ্গ করে সাবকবলা ক্রয় করে নেন। আমরা তাহার কাছে আমাদের পাওনা বকেয়া টাকা কথা বলতে গেলে তিনি বলেন আমি সমুদ্যয়র টাকা সরকারকে পরিশোধ করে সকল নিয়মকানুন মেনে মিল ক্রয় করেছি। আপনারা সরকারের কাছে জান এবং আপনাদের প্রাপ্য টাকা বুঝে নেন । এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমাদের উপর রাষ্ট্রীয় জুলুম থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি।

মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি হান্নান মিয়ার কাছে জিজ্ঞাস করে জানা যায় উনারা দীর্ঘ দিন যাবত বিভিন্নভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন আন্দোলন করেছেন পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা মিটিং করা হয় কিন্তু সরকারের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত স্বার্থন্বেষী মহালের কারনে আমরা এ পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কালীগঞ্জের সর্বস্তরের নেত্রী স্থানীয় ব্যক্তির কাছে আমাদের আবেদন আমাদের পাওনা অধিকার পরিশোধ করার জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন।

মুসলিম কটন মিল শ্রমিক সন্তান পরিষদের সভাপতি আ: মান্নান বলেন আজ থেকে ৩৩ বছর পূর্বে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে আসছি। হরতাল, রেল পথ, রাজপথ অবরোধ, মানববন্ধন, অনশনের মত কর্মসূচি করেও আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা পাইনি।হঠাৎ করে মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়া চলাফেরা সকল কিছু বন্ধ হয়ে যায়। অনেক মেধাবি সন্তান পড়ালেখা দেখে বঞ্চিত হয় বিনা চিকিৎসায় অনেকে মারা যায় তারপরও আমরা বকেযা টাকা পায়নি। আশার কথা ছিল মিলটি বিক্রি করার সময় আমরা হয়তো টাকা পয়সা ক্রি করে দেয়।
শ্রমিক আলাউদ্দিন ২ নং মিলে তাঁত শাখায় কর্মরত ছিলেন মিল বন্ধ হওয়ার কারহণে তিন সন্তান, পরিবারসহ চরম বিপদে পড়েন। তিনি বলেন হঠাৎ করে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার অর্থ ইনকামের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায় অনাহারে দিন যাপন করতে হয় ছেলে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় অমানবিক জীবন যাপন করতে হয়। তাতে করে আমার সন্তানরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হইতে পারতো কিন্তু তারা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় । অন্যের কাজ করে জীবন-যাপন করতে হয় শিশু বয়স থেকে। দ কালীগঞ্জের মুসলিম কটন মিলের শ্রমিকদের
দাবি দীর্ঘ ১১ বছরপূর্বে মিলতি হামিম গ্রুপের কাছে হস্তান্তর হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়েগেলেও আমাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ হয় নাই পতিত সরকারের যে সকল দুষ্কৃতিকারী দুর্নীতিবাজ অসাধু মন্ত্রী এমপি সচিব এবং কর্মকর্তাদের কারণে আমাদের পাওনা টাকা এখনো আমরা পাই নাই তাদের বিচারের দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি ৩৫০০ শ্রমিকের ন্যায্য রক্তের গামা পরিশ্রমের বকেয়া টাকা পরিশোধ করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।

অন্যদিকে আশার বিষয় হলো মিনটি হামিম গ্রুপ নেওয়ার কারণে বর্তমানে পাঁচ হাজারের মতো কর্মী এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন। হামীম গ্রুপ গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করায় কালীগঞ্জ সহ অত্র এলাকার মানুষের কর্মের সৃষ্টি হয় হাজার হাজার মানুষ এখান থেকে উপার্জন করতে পারছি। পাশাপাশি এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে। ভবিষ্যতে মালিকপক্ষ আরও শিল্প, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান এখানে করবেন বলে আশা করা যায়।
মুহাম্মদ নোমান
দৈনিক স্বাধীন সংবাদ ।
কালীগঞ্জ ( গাজীপুর)প্রতিনিধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *