চান্দিনায় হত্যার পর প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় মৃতদেহ: তিন আসামী গ্রেপ্তার

এটিএম মাজহারুল ইসলাম:

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরকইট গ্রামের জনাফরা বাড়িতে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঘটে শবদর আলী হত্যার ঘটনা। শবদর আলী সকালে ফজর নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। সকাল ৮:৩০ টার দিকে, তার স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। এ সময় পাশের বাড়ির ইউনুছ মিয়া এসে জানান যে, শবদর আলী তাদের বাড়ির পুকুরপাড়ের আম গাছের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আছে।

ঘটনাস্থলটি কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার বরকইট গ্রামে, মৃত আহাম আলীর বসতবাড়ির উত্তরে ছিল। আম গাছের সঙ্গে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শবদর আলীকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, এবং তার পা হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে লেগে ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে, এবং পোস্টমর্টেমের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। প্রথমদিকে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

তিন মাস পর, শবদর আলীর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পর, মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. ইমাম হোসেন বুঝতে পারেন যে, শবদর আলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং পরে তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলামকে অবহিত করলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

শবদর আলীর স্ত্রী রিনা বেগম ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে রাতে পাঁচজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ১১ জুলাই ২০২৫ তারিখে অভিযানে গিয়ে তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: ইউনুছ মিয়া (৫২), আবুল হাশেম (৪২) এবং কুদ্দুছ (৫৫)।

রিনা বেগম বলেন, “বিবাদীরা আমার স্বামীর কাছ থেকে মৌখিক চুক্তিতে ৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। এক বছর মেয়াদ শেষে তারা টাকা পরিশোধ না করে আমাদের সঙ্গে নানা অসুবিধা করতে থাকে। আমার স্বামী যখন তাদের পাওনা টাকা চাইলে তারা তাকে মারধর করে। এক সপ্তাহ পর তারা আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেয় এবং এক সপ্তাহ পরে আমার স্বামীকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।”

রিনা বেগম আরও বলেন, “যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক।”

বরকইট ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি মো. নাছির জানান, “পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা গেছে যে শবদর আলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং পরে তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে সঠিক আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”

এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন, “তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একজন আসামী ঘটনার ৮-১০ দিন পর প্রবাসে চলে গেছে এবং একজন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তবে আমরা অতিদ্রুত তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *