স্বাধীন বিনোদন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশে শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ‘সিনেমা আঙ্গিনা’, যার মাধ্যমে দেশের জনগণকে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতন করা হবে। এশিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাধ্যমে পদার্পণ করা এই প্রদর্শনী ১৩ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলায় ভ্রমণ করবে।
‘সিনেমা আঙ্গিনা’ মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক গণযোগাযোগ প্রচারণা। এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাট্য পরিবেশনা, সংগীতানুষ্ঠান, কর্মশালা এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্শনী চলাকালীন ১৩টি পৌরসভা এবং প্রায় ৪৮০টি গ্রামে পৌঁছানো হবে। জেলাভিত্তিক টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হবে।
উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
আইওএম জানিয়েছে, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ও স্থানীয় জনগণকে অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত করা হবে।
২০০২ সালে ইতালীয় সহযোগিতার উদ্যোগে প্রথম শুরু হওয়া ‘সিনেমা আঙ্গিনা’ মূলত সামাজিক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৮ সাল থেকে এটি আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি তুলে ধরতে এবং সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণকে উৎসাহিত করার এক প্রচারণায় রূপান্তরিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও সাফল্য
গত সাত বছরে ‘সিনেমা আঙ্গিনা’ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে—সেনেগাল, কোত দি’ভোয়ার, গিনি, দ্য গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও তিউনিসিয়াস—৬৭০টিরও বেশি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে এবং প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এই কার্যক্রমে শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলে চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত, কর্মশালা এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে শক্তিশালী বার্তা প্রদান করা হয়েছে।
আইওএমের বাংলাদেশ মিশন প্রধান ল্যান্স বোনো বলেন,
“যখন অভিবাসন নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে হয়, তখন তা উন্নয়নের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। ‘সিনেমা আঙ্গিনা’ এমন এক সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম যা সরাসরি জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলো পৌঁছে দেয় এবং মানুষকে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।”
এছাড়াও, আইওএমের ভূমধ্যসাগরীয় সমন্বয় অফিসের পরিচালক সালভাতোরে সর্তিনো বলেন,
“বাংলাদেশে ‘সিনেমা আঙ্গিনা’ প্রচারণা এক নতুন সূচনা। আফ্রিকার তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে নতুন অভিজ্ঞতা। আমরা আনন্দিত যে আইওএম এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছে, যেখানে সম্ভাবনার কোনো ঘাটতি নেই। এটি ইতিবাচক বার্তা প্রচার, গঠনমূলক আলোচনা ও অভিবাসন বিষয়ে পারস্পরিক শেখার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করবে।”
সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সম্প্রদায়িক উদ্যোগ
প্রদর্শনী সামাজিক সংগঠন, তরুণ শিল্পী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে উৎসাহিত করা হবে দায়িত্বশীলভাবে এই প্রচারণা তুলে ধরতে। ‘সিনেমা আঙ্গিনা’ বাংলাদেশের জনগণকে নিরাপদ, নিয়মিত ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের পথ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা সুযোগ নিয়ে আলোচনা ও অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।
আইওএম আশাবাদী, এই ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দেশের তরুণ প্রজন্ম ও স্থানীয় জনগণকে অনিরাপদ অভিবাসন ও জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করবে এবং তাদেরকে সচেতন, দায়িত্বশীল ও সৃজনশীল সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করবে।