নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানার গণপূর্তের মিস্টার ১৫% — ঘুষ খেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সম্পদ

স্টাফ রিপোর্টার:

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেও থামছে না সরকারি বিভিন্ন দফতরে অস্থিরতা। কোথাও রাজনৈতিক ভোল পাল্টে আগের মতোই দাপট দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কোথাও আবার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তটস্থ থাকলেও কৌশলে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে নগর গণপূর্ত বিভাগ ঢাকা-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানার অনিয়ম, দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তোলপাড় মন্ত্রণালয়।
ঢাকা নগর গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানা গণপূর্তের “মিস্টার ১৫%” ঘুষখোর কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এ থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় হাজার কোটি টাকার টেন্ডারে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন, টেন্ডারের তথ্য ফাঁস, দর-কষাকষির নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

টেন্ডার পাশ না হওয়ার আগেই ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে টাকা আত্মসাত করার তথ্য পাওয়া গেছে।
এমনকি কাজ না করেও ভুয়া ভাউচার করে, বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।

ঢাকা শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ তে থাকাকালীন এই নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানা সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারপর সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন।
তিনি গণপূর্তের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব পালনকালে নির্ধারিত বরাদ্দের বাইরে ঘুপচি বিজ্ঞাপন করে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানা সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলমের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে ও কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।

গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতি মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে তাকে বদলি করা হয় অন্য ডিভিশনে। কিন্তু তার ক্ষমতার কাছে মন্ত্রণালয় বড়ই অসহায় হয়ে পড়ে।

তাছাড়া বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, নিজস্ব পারসোনাল ফ্ল্যাট, বাসায় নারীদের নিয়ে রঙ্গরস — অধিদপ্তরের অনেকের কাছেই ওপেন সিক্রেট। দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের আমলে মহা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকায় মাসুদ রানা অন্যতম নাম।
এছাড়া ঢাকায় রয়েছে বিভিন্ন জায়গায় প্লট, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, স্বর্ণের অলংকার ভরি ভরি।

নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানার অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
রাজধানী গুলশানে আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছেন যেটি মূলত তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া।

রাজধানীর রামপুরা বনশ্রীতে রয়েছে পাঁচ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। যার ঠিকানা ব্লক-ডি, বাসা-নং ৫৪/ডি, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা।

এছাড়া রামপুরার বনশ্রীতে এফ ব্লকের বাসা-নং ৭৯/১/এফ, মোল্লা ম্যানশন-এর দ্বিতীয় তলায় ১২শ স্কয়ার ফিটের দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তার স্ত্রীর নামে। যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।

আরও রয়েছে তার স্ত্রীর নামে বসুন্ধরা সিটির পঞ্চম তলায় বি ব্লকের দোকান-নং ৫৯/বি এবং ৭৮/বি — এই দুটি দোকান ক্রয় করেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। একটি দোকান আত্মীয় চালাচ্ছে, আরেকটি দোকান ভাড়া দেওয়া।

মোহাম্মদপুর বাবর রোডে ১০ কাঠার প্লট কিনেছেন তার নিজের নামে। ঠিকানা বাসা-নং ১৮৯/এ, রোড-নং ৯, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার উপরে।

মোহাম্মদপুরে একটি বাড়ি সহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও জায়গা-জমি কিনেছেন। নিজের নামে, স্ত্রীর নামে, নিজের আত্মীয়-স্বজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামে জায়গা কিনে রেখে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *