পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি, ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

নগদ টাকা হাওলাদ দিয়ে প্রতারণার শিকার আবদুল আজিজ। টাকা ফেরত চাইলেই উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্ণফুলী থানা শাহ মীরপুর সিকদার পাড়া ৫ নং ওয়ার্ড খন্দকার বাড়ির বাসিন্দা ইমতিয়াজ ফারুকীর বিরুদ্ধে।

৩ দফায় সাতকানিয়া কেরানীহাট শাখা ইসলামী ব্যাংক থেকে কৌশলে আবদুল আজিজের একাউন্ট থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে ইমতিয়াজ ফারুকী তার পরিচিত অন্যান্য একাউন্টে ট্রান্সফার করে মোট ৫,৫০,০০০ (পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা হাওলাদের নামে হাতিয়ে নিয়েছে।

তন্মধ্যে ব্যাংক একাউন্ট চেক করে লোহাগাড়া উপজেলা আমিরাবাদ মাষ্টার হাটের বিকাশ দোকানদার আমির নামের এক ব্যক্তির একাউন্টে কিছু টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে।

জানা গেছে, আবদুল আজিজের সাথে ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের পর ইমতিয়াজ ফারুকীর পরিচয় ঘটে আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে।

করোনা কালীন সময়ে সদ্য দেশে ফিরে সাতকানিয়া কেরানীহাটে ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে ইমতিয়াজ ফারুকী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চট্টগ্রাম শহর থেকে সপ্তাহে অন্তত তিনবার এসে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে। প্রতিবারেই আব্দুল্লাহ আল মামুন (৫০), পিতা আবু শামা, ১০ নং কেঁউচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা — তার সাথেই এসে ভাব জমিয়ে বিভিন্ন অভাব-অনটনের অজুহাতে কিছু অর্থ হাওলাদ চাইতো। প্রথমদিকে আবদুল আজিজ দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও ইমতিয়াজ ফারুকী বারবার অনুরোধ করত।

এভাবে বারবার এসে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রবাসী আবদুল আজিজকে ইমতিয়াজ ফারুকীর প্রবাস জীবনের বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে সুপারিশ করাতে থাকে।

এক পর্যায়ে ইমতিয়াজ ফারুকীর অতিরিক্ত কান্না, অনুনয়-বিনয়, কাকুতি-মিনতি ও তার বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং যায়েদ (২২), পিতা মনির আহমদ, ১৫ নং ছদাহা ইউনিয়নের বাসিন্দা— এই দুজনের সাক্ষীতে এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেবে মর্মে ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে প্রথম দফায় ৩,৫০,০০০ (তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১,৫০,০০০ (এক লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা এবং তৃতীয় দফায় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা— সর্বমোট ৫,৫০,০০০ টাকা ধার দেয়।

এদিকে আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্পর্কে আবদুল আজিজের আত্মীয় ও বন্ধু বলে জানা গেছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইমতিয়াজ ফারুকী সৌদি আরব থেকে বন্ধুত্ব করেছে। সে এভাবে আমাদেরকে বিশ্বাস করিয়ে প্রতারণা করবে— এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। বন্ধুর ছদ্মবেশে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে আবদুল আজিজের টাকার বিষয়ে আইন-আদালতে প্রয়োজনে সাক্ষ্য দেব ইনশাআল্লাহ।” একই কথা বলেছেন সাক্ষী যায়েদও।

ইমতিয়াজের সাথে টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আবদুল আজিজকে ৫ হাজার করে লোহাগাড়া আমিরাবাদ মাষ্টার হাট বিকাশ দোকানদার তার আরেক পরিচিত বন্ধু ও পার্টনার আমিরের মাধ্যমে মোট ২০ হাজার টাকা এবং ইমতিয়াজ ফারুকী নিজে থেকে ৯ হাজার টাকা প্রদান করেন।

এরপর থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি ইমতিয়াজের সাথে কয়েকবার আলোচনা করা হলে তিনি বলেন অর্থ নিয়ে কিছুটা টানাহেঁচড়া চলছে, সময় দিলে টাকা ফেরত দেবেন।

আবদুল আজিজের টাকা দিয়ে ক্রয় করা সেকেন্ড হ্যান্ড প্রাইভেট কারটি (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৫৩০০) কিছু টাকা দাম ধরে গাড়িটি তার নামে স্ট্যাম্প করিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে বেশ কিছুদিন সময় পার করে।

আবদুল আজিজ তার চালচলন বুঝতে পেরে ১১/১১/২০২৪ তারিখে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় প্রেসক্লাবের সামনে লিচু বাগান জামাল খান এলাকায় ইমতিয়াজের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে টাকা ও গাড়ির বিষয়ে আলোচনা করলে ইমতিয়াজ ফারুকী সু-কৌশলে তার ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের ডেকে চেরাগী পাহাড়ের দিকে অজ্ঞাত স্থানে দু’জনকেই নিয়ে যাচ্ছিল। তার কৌশল টের পেয়ে তারা রাজি না হলে সন্ত্রাসীরা গলা ধাক্কা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

সর্বশেষ ২২/১১/২০২৪ বিকাল ৩টার দিকে আনোয়ারা থানাধীন চৌমুহনীস্থ বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের দিকে যাওয়ার সময় মহাসড়কে ঘোরাঘুরির সময় পাওনাদার আবদুল আজিজ হঠাৎ ইমতিয়াজকে ৪/৫ জন ব্যক্তির সাথে দেখতে পান। টাকা ফেরতের কথা বলতেই ইমতিয়াজের সাথে থাকা লোকজন গালিগালাজ ও হুমকি দেয় এবং টাকা দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

এদিকে পাওনাদার আবদুল আজিজ, সাতকানিয়া উপজেলার কেঁউচিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, জানান— ইমতিয়াজ ফারুকী (৪২), পিতা ইব্রাহিম, মাতা খালেদা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা শাহ মীরপুর ৫ নং ওয়ার্ড সিকদার পাড়া খন্দকার বাড়ি, থানা কর্ণফুলী, জেলা চট্টগ্রাম। বর্তমানে তিনি চরপাথরঘাটা ১ নং ওয়ার্ড শাহ ছমিয়ানগর ভাড়া বাসার ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনের ৪র্থ তলায় বসবাস করছেন।

আবদুল আজিজ বলেন, টাকা এবং গাড়ি বুঝিয়ে না দিলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *