রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা করে বিপাকে বাদি আব্দুল জলিল; মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির

মিজান:

ঢাকার বংশাল থানায় গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল আনুমানিক ৪.৫০ ঘটিকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের ওপর একটি ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা তাকে মারধর ও ধারালো চাকু দিয়ে গুরুতর কাটা জখম করেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা চুরি ও ভয়ভীতি প্রদানের মাধ্যমে তার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

আব্দুল জলিলের বরাত দিয়ে জানা যায়, হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন মোঃ সিরাজুল ইসলাম রাজু। তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সহায়তা করেছেন। হামলার সময় তারা বেআইনীভাবে জনতা গঠন করে ঘটনা সংঘটিত করে। এতে আব্দুল জলিল সাধারণ জখমের পাশাপাশি গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখমে আহত হন।

ঘটনার পর আব্দুল জলিল ১১ সেপ্টেম্বর বংশাল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, “অভিযুক্তরা আমার হুকুমে এই সমস্ত অপরাধ সংঘটিত করেছে।” বংশাল থানা অভিযোগটি যাচাই করে আদালতে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত করেছে।

মামলার বিস্তারিত অনুযায়ী, মামলা নম্বর ৯, বাৎসরিক নম্বর ২৩১। অভিযোগের ধারা হলো ১৪৩, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯ ও ৫০৬, যা দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর অধীনে দায়ের করা হয়েছে। ঘটনা সংঘটিত হয় ১৬৩ নবাবপুর রোডের টাওয়ার ইলেকট্রিক মার্কেটের ২য় তলায়, ওয়ার্ড নং-৩৪, বংশাল, ঢাকা, যা বংশাল থানার কেন্দ্র থেকে প্রায় ১.৫০ কিমি দূরে, উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান অভিযুক্ত মোঃ সিরাজুল ইসলাম রাজু ৪৩ বছর বয়সী একজন পুরুষ। তার স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম-৬৪, বিসিসি রোড (২য় তলা), থানা ওয়ারী, ঢাকা। পিতার নাম আব্দুল মজিদ মাতবর। তার পেশা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪–৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হামলায় অংশগ্রহণ করেছেন, যাদের পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি বংশাল থানার আইও।

বংশাল থানায় দায়েরকৃত এজাহারের ভিত্তিতে আদালতে মামলার প্রেরণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। আব্দুল জলিল এবং প্রাথমিক তথ্য প্রদানকারীর সমস্ত তথ্য বংশাল থানার আইও কর্তৃক প্রত্যয়িত হওয়ার পর মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মামলার আয়ু জানান, বংশাল থানার মধ্যে আসামির পক্ষে আল আমিন নামের একজন ব্যক্তি এসে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। পরে তিনি ডিসি লালবাগকে ফোন করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেন।

আব্দুল জলিলের বক্তব্য অনুযায়ী, খুলনার ওটরা ফুলতলা খান জাহান আলী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন মামলা তুলে আপোষ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি ভয়ভীতি দেখান যে তার গাজিপুর ও ঢাকার প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রভাব রয়েছে। এর ফলে বংশাল থানার মামলার আইও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আব্দুল জলিল মামলার বিষয়ে ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অভিযুক্ত আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, তিনি একজন ক্রিকেটার এবং পুলিশ ব্যারেকে রয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে তার আচরণ সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। এক পর্যায়ে এস আই সোহাগ সাংবাদিকের নাম্বারে ফোন করে বলেন, “আপনি আল আমিনের নাম্বারে ফোন দিয়ে তাকে হুমকি দিয়েছেন।” সাংবাদিক জানান, বংশাল থানার ওসি ও আল আমিনের বক্তব্য প্রত্যেকটি রেকর্ড করা আছে। শুনে এস আই সোহাগ ফোন কেটে দেন।

আব্দুল জলিল আরও জানিয়েছেন, মামলার পর পাঁচ দিন পেরিয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। বংশাল থানার মামলার আইওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া আল আমিনের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো আইও প্রদত্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি চরম হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মামলার আসামিরা লোক মারফত হুমকি দিচ্ছে যে মামলা তুলে না নিলে বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে। তাই মামলাও করলেও আব্দুল জলিল ভয়ে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *