বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ-এর সাবেক যুগ্ম পরিচালক সাইফুল হক খানের সম্পত্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ: ভুক্তভোগীদের তীব্র নিন্দা

এ.আর. মিজান:

ঢাকা: বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ওয়ারফেয়ার টার্মিনাল অথরিটি (বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ)-এর সাবেক যুগ্ম পরিচালক মোঃ সাইফুল হক খান তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগে সরব। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহানারা বেগম (৫০) স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

শাহানারা বেগম জানান, “২০১২ সালে বি.এল.ডব্লিউ.টি.এ-এর সদরঘাট এলাকায় ট্রানজিট সেড বরাদ্দের সময় সাইফুল হক খান পদে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি তার ভাই, শ্যালক, শালী ও আত্মীয়স্বজনকে বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষ এবং আমরা অনেকেই আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার এক ভাইকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে সেই দোকান ঘর ভেঙে অন্যত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কর্মকর্তা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তার নামে-বেনামে সম্পদের পাহার সমান গড়ে তুলেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “তিনি শুধু স্থানীয় বরাদ্দ নয়, বরং নৌবন্দর থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার নামে ও স্ত্রীর, কন্যা-পুত্রদের নামে গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে। তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনও এই সম্পদের ভাগে বঞ্চিত হয়নি। আমেরিকায় থাকা আমার ভাইয়ের কোটি কোটি টাকাও তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিদেশ পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যা হলে আমরা ভুক্তভোগীরা আর কোনো আইনি সহায়তা পাবো না।”

শাহানারা বেগম আরও অভিযোগ করেন, “সাইফুল হক খানের ভাই মাহমুদুল হক খান তার ডানহাত হিসেবে কাজ করেন। মাহমুদুল হক খান দেশের নামি একটি এন্টারপ্রাইজের আড়ালে ইয়াবা, হিরোইনসহ বিভিন্ন মাদকের চালান আদান-প্রদান করেন। অন্য ভাই আশরাফুল হক খান ভুক্তভোগীদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে সক্রিয়। সাইফুল হক খান নিয়মিত আদালতে হাজির হন এবং  মন্ত্রীর মতো চলাফেরা করেন।”

ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্পত্তির তালিকা অনুযায়ী:

  • জুরাইন মৌজাস্থিত সি.এস দাগ নং-৮৩৮৬, ৯ শতাংশ খানা, শ্যামপুর, ঢাকা।

  • বাড়ী/ফ্ল্যাট ২৭৯/১, দনিয়া ওয়ার্ড নং-৫১ (পাট), শ্যামপুর, ঢাকা-১২০৬।

  • বাড়ী/জমি ৩৭১, দনিয়া, শ্যামপুর, ঢাকা-১২৩৬, যা ২০০৪ সালে ক্রয় করা।

  • তার নামে একটি  গাড়ি।

তাছাড়া, তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হিসাবের মধ্যে:

  • অগ্রণী ব্যাংক (জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়), সঞ্চয়ী হিসাব নং-৩৬৫৮

  • অগ্রণী ব্যাংক (ধোলাইপাড়), সঞ্চয়ী হিসাব নং-১০২০

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ (মিরপুর শাখা)

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
১. মোঃ শামীম আহম্মেদ খান, আর.কে.মিশন রোড, গোপীবাগ, ঢাকা।
২. মোঃ মাহমুদুল হক খান, ৬৭১ পূর্ব ধোলাইপাড়, ঢাকা।
৩. আশরাফুল হক খান, ৬৭১ পূর্ব ধোলাইপাড়, ঢাকা।
৪. মোঃ ইকবাল হাফিজ, ৬৭১ পূর্ব ধোলাইপাড়, ঢাকা।

এ বিষয়ে সাইফুল হক খান বলেন, “বিগত তিন বছর যাবত এই যন্ত্রণায় ভুগতেছি। বাড়ি, গাড়ি—যা আছে তাই সবই সত্য কিন্তু বৈধভাবে কামাইছি। আমি অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। আমার আত্মীয়-স্বজন সব ফাঁস করে দিল। এরকম আত্মীয়-স্বজন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।”

বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ-এর সাবেক যুগ্ম পরিচালক মোঃ সাইফুল হক খান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সূত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *