রাসায়নিকনির্ভর কৃষির ফলে কৃষি উৎপাদন সংকটে: মৎস্য উপদেষ্টা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের আবাদি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, “কৃষিজমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং রাসায়নিকনির্ভর কৃষির ফলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের সংকটে পড়ছে।”

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাগ্রোইকোলজি প্ল্যাটফর্ম।

ফরিদা আখতার বলেন, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে দেশে নতুন নতুন রোগবালাই বাড়ছে, নানা ধরনের পোকামাকড় দেখা দিচ্ছে। কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে জমির উর্বরতাও কমে যাচ্ছে। “দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক উৎপাদনশক্তি নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষিতে টেকসই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, একসময় একটি জমিতে একাধিক ফসল চাষ হতো। কিন্তু আধুনিক কৃষি পদ্ধতির বাড়তি চাপের কারণে এখন সেই বহুবিধ ফসল চাষ আর আগের মতো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কৃষির বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে, যা খাদ্যনিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।

মৎস্য খাতের প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, অ্যাকুয়াকালচারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি কখনোই দেশের একমাত্র উৎস হতে পারে না। “একসময় দেশের ৬০ শতাংশ মাছ আসত মুক্ত জলাশয় থেকে। এখন উল্টো চিত্র—বেশিরভাগ মাছই আসে চাষের মাধ্যমে। উন্মুক্ত জলাশয়ের দূষণ, ভরাট, দখল এবং পর্যটনের চাপের কারণে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে, যা দেশীয় মাছের বৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি।”

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বদরুল আলম। তিনি বলেন, কৃষি এখনো বাংলাদেশের ১১ শতাংশ জিডিপির উৎস এবং অধিকাংশ গ্রামীণ মানুষের প্রধান জীবিকা। দেশে বর্তমানে ৮.৮২ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে, যার পরিমাণ দ্রুত কমছে। প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে নগরায়ণ, শিল্পায়ন, সড়ক নির্মাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিজমি রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিদখল, বেসরকারিকরণ, রাসায়নিকের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। “সরকার কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি,” মন্তব্য করেন তিনি।

কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।

বক্তারা সমন্বিত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং কৃষিভিত্তিক ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের ওপর জোর দেন। তারা বলেন, কৃষি, পরিবেশ, মৎস্য ও ভূমি ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়বে।

কর্মশালায় কৃষি, ভূমি, পরিবেশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা, গবেষক, কৃষিবিদ, উন্নয়নকর্মী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *