শাপলা প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবে এনসিপি: সারজিস

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:  

পঞ্চগড়: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিজস্ব প্রতীক “শাপলা” নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, দলটি যে কোনো রাজনৈতিক এলায়েন্সে যেতে পারে, তবে তা হবে এনসিপির নিজস্ব নামে ও প্রতীকে। অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জামালপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এনসিপির জেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই ঘোষণা দেন।

সারজিস আলম বলেন, “আমরা আমাদের দলীয় পরিচয় ও আদর্শ নিয়েই নির্বাচনে যাচ্ছি। শাপলা প্রতীক আমাদের সংগ্রামের প্রতীক। এটা কোনো দলের পেছনে লুকিয়ে থাকা বা অন্য প্রতীকে নির্বাচন করার সময় নয়। জনগণ এখন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি খুঁজছে, আর এনসিপি সেই শক্তি হয়ে উঠতে চায়।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় ছোট দলগুলো এলায়েন্সে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আমরা সেটি চাই না। জনগণের কাছে আমরা আমাদের নাম, প্রতীক ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হব। এটাই আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের এই মুখ্য সংগঠক বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ যারা সরাসরি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার দৃশ্যমান না হলে নির্বাচনের সময়সূচি পিছিয়ে যেতে পারে। এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ন্যায়ের বিচারের পূর্বে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”

তিনি আরও জানান, “আন্তর্জাতিক আদালতের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আমাদের জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই মামলার রায় হতে পারে। সরকার জুলাই সনদও বাস্তবায়ন করবে। জনগণ এই বিচারের অপেক্ষায় আছে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, “প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই তাদের প্রতীক বেছে নিয়েছে। আমাদের পছন্দ শাপলা। কারণ শাপলা শান্তি ও ঐক্যের প্রতীক। এটি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন আমাদের পছন্দের প্রতীক অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতীকের ছায়ায় নয়—শাপলার পতাকাতলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই।”

চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনাল বিদেশি সংস্থার কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, “যদি সরকারের সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে হয়, আমরা তাতে দ্বিমত করব না। কিন্তু দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে, এনসিপি যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—দেশের স্বার্থ আগে, দলীয় স্বার্থ পরে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বন্দর ও কৌশলগত স্থাপনাগুলো যেন কোনো দলীয় স্বার্থে ব্যবহার না হয়। রাষ্ট্রের সম্পদ রাষ্ট্রেরই থাকবে, জনগণের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।”

জেলা এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা প্রধান সমন্বয়কারী লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর আমীনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা। সভায় নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করা, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে দলীয় কর্মসূচিকে আরও তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় সারজিস আলম বলেন, “আমরা রাজনীতিতে নতুন ধারা গড়তে চাই। জনগণ এখন ঐতিহ্যবাহী দুই দলের বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির অপেক্ষায় আছে। এনসিপি সেই বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে কাজ করছে।”

সারজিস আলম আরও বলেন, “যারা দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়, তাদের জন্য এনসিপি একটি খোলা প্ল্যাটফর্ম। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রতীক হবে শাপলা—এই প্রতীকের নিচে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *