সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুরে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

 

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটার স্থানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে এবং ৮৮৫ কিলোমিটার স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি।

গত ৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুরে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কুঁড়িগ্রাম ও নওগাঁ সীমান্তের ওপারেও কাঁটাতারে বেড়া তৈরির চেষ্টা করে বিএসএফ। মোট পাঁচটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাঁটাতারের বেড়া আসলে এমন একটি ইস্যু, যা নিয়ে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে তো বটেই –এ দেশের একাডেমিক ও বিশ্লেষকদের মধ্যেও পরিষ্কার দ্বিমত আছে।ভারতীয়রা কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে ভালো ও মন্দ, দুরকম মতামতই দিয়েছেন।

সীমান্তে বেড়া দেওয়ার ফলে অপরাধ বা চোরাকারবারে রাশ টানা গেছে – কিংবা গরিব গ্রামবাসীদের গোয়াল থেকে গরু-বাছুর চুরি করে সীমান্তের অন্য পারে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক কমেছে, এটা তারা অনেকেই স্বীকার করেছেন।

কিন্তু বেড়া দেওয়ার ফলে যাদের কৃষিজমি কাঁটাতারের অন্য দিকে পড়েছে, বিশেষ করে তারা এটা নিয়ে যথারীতি খুবই ক্ষুব্ধ।

বিএসএফের দেওয়া বিশেষ পারমিট নিয়ে তারা এখন দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য জমিতে চাষ করতে যেতে পারেন – কিন্তু মাঝেমধ্যেই নানা অজুহাতে ফেন্সিংয়ের গেট খোলা হয় না বা জমির ধান চোখের সামনে লুঠ হয়ে যায় – তাদের এই অভিযোগও কান পাতলেই শোনা যায়।

বেড়া বসানো হলে তারা ভারতের মানচিত্রের বাইরে ছিটকে যাবেন, এই আশঙ্কায় বছরকয়েক আগে মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলসের লিংখং নামে সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দারা তো কাঁটাতার লাগাতেই দেননি!

ভারতের দিকে গ্রামবাসীদের বাধায় বেড়া বসানোর কাজ আটকে গেছে, এমন ঘটনা আরও বহু এলাকাতেই ঘটেছে।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মুচকুন্দ দুবে প্রায়ই বলতেন, ‘এই কাঁটাতারের বেড়া জিনিসটা একটা মান্ধাতার আমলের কনসেপ্ট, এটা একুশ শতকে একেবারেই চলতে পারে না!’

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো মেক্সিকো আর আমেরিকার মধ্যে দেওয়াল তুলেছেন, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি মনে করি ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেয় তার মধ্যে একটা চরম স্ববিরোধিতা থাকে – কারণ আমরা একদিকে দোস্তির স্লোগান দেব আর অন্য দিকে বর্ডারে দেওয়াল খাড়া করব, দুটো এক সঙ্গে হয় না।

অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (অধুনা প্রয়াত) ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য আবার যুক্তি দিতেন, ‘এই ফেন্সিং যে সীমান্তে অনেক ধরনের নেতিবাচক কাজকর্ম ঠেকাতে পেরেছে তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই!’

তার বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ-ভারত উন্মুক্ত সীমান্তের চরিত্রটাই এমন যে এখানে নানা ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক – আর সেটা ঠেকানোর জন্য কাঁটাতারের বেড়ার চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প ভারতের হাতে নেই।

অনেকটা একই কারণে বাংলাদেশকেও যে একটা পর্যায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কথা ভাবতে হয়েছিল, ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তথ্যসূত্র-বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *