সেনা সদস্যদের গ্রেফতার দেখানো হলে তাদের আদালতে হাজির করতেই হবে: চিফ প্রসিকিউটর

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা সেনা সদস্যদের গ্রেফতার দেখানো হলে তাদের আদালতে হাজির করতেই হবে। এরপর ট্রাইব্যুনালই ঠিক করবে, আসামিদের সাবজেল (Sub Jail) না অন্য কোনো কারাগারে পাঠানো হবে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাবজেল হিসেবে ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, “যেকোনো স্থানকে কারাগার বানানোর এখতিয়ার সরকারের আছে। তবে ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী কোনো আসামিকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতেই হবে। আদালতই পরবর্তী নির্দেশ দেবে।”

ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রোববার (১২ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে—
“ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস বিল্ডিং-৫৪’, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকাকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো।”

যদিও প্রজ্ঞাপনটি জারি হয় রোববার, তবে তথ্যটি জানা যায় সোমবার (১৩ অক্টোবর)।

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে সেনা সদর। সেনা সদর সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাদের সামরিক হেফাজতে রাখা হয়েছে।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাই আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করতেই হবে। ট্রাইব্যুনাল চাইলে সাবজেলেই তাদের রাখা হতে পারে, অথবা অন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে।”

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবজেল ঘোষণা করার মাধ্যমে সরকারের হাতে আসামিদের নিরাপত্তা ও আবাসিক বন্দিত্বের একটি বিকল্প পথ তৈরি হয়। তবে এর মাধ্যমে কোনোভাবেই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার খর্ব হয় না। আদালতই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবে।

এই ঘটনাকে অনেকে ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কারণ প্রথমবারের মতো সেনানিবাসের একটি ভবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে মামলার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই প্রজ্ঞাপন জারির পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সেনানিবাসকে কারাগার ঘোষণা করা নিরাপত্তার দিক থেকে ইতিবাচক হলেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

অন্যদিকে আইনজীবীদের একটি অংশ বলছে, এই পদক্ষেপ সরকারের জন্য কৌশলগত হলেও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আসামিদের অবস্থান ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।

এই ঘটনার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ার একটি নতুন ধাপ শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *