“আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ী তোফাজ্জলের কারখানায় হামলা-লুটপাট”

স্টাফ রিপোর্টার :


রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর নবীনগর এলাকার বুটিক ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বর্তমানে চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীদের হামলা, কারখানায় ভাঙচুর ও লুটপাটে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সত্ত্বেও আজও তিনি কোনো ন্যায়বিচার পাননি।

তোফাজ্জলের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামে। তিনি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর নবীনগর ১০ নম্বর রোডের মজিবুর রহমানের ২৬ নম্বর বাড়ির নিচতলায় “নাহার বুটিক্স” নামে ব্যবসা করতেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নয় বছর এ ব্যবসা চালান। প্রথমে স্বল্প মূলধন দিয়ে শুরু করলেও পরে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বড় হয়।

বকেয়া টাকা ফেরত চাইতেই সর্বনাশ

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী তোফাজ্জল জানান, তিনি কারখানায় ১৫-২০ জন কর্মচারী নিয়ে কাজ করতেন। চাঁদনী চক মার্কেটের ফেয়ার টাচ প্লাস দোকান (নং ১৩১ ও ১৩২) ও চিশতীয়া মার্কেটের নিউ ফেয়ার টাচ থ্রি-পিস দোকানের ব্যবসায়ী নূর আলম, জনি ও বাবুর সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করেন। তাদের কাছ থেকে তোফাজ্জলের প্রায় ১৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৩৫ টাকা পাওনা ছিল। টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাকে ব্যবসা ধ্বংস করার হুমকি দেওয়া হয়।

হামলা ও লুটপাটের ঘটনা

একাধিক সূত্রে জানা যায়, নূর আলম, তার সহযোগী শিমুল মাতাব্বর, সৈকত মাতাব্বর এবং কারখানার ম্যানেজার আকবর হোসেনসহ ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার হামলা চালায়।
বিশেষ করে ১০ মে ২০২৪ সালের রাতে তারা কারখানায় ঢুকে তোফাজ্জলকে মারধর করে, হত্যার হুমকি দেয় এবং তাকে জোরপূর্বক চুরির দায় স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে ভিডিও ধারণ করে। ওই সময় প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকার জাপানি ও চায়না ব্র্যান্ডের ২২টি মেশিন ভাঙচুর করে এবং ১৮ লক্ষ টাকার কাপড়, থ্রি-পিস, সুতা, হিসাবের খাতা-নথি লুট করে নিয়ে যায়। মোট ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকা।

মামলা করতেও বাধা

ঘটনার পর থানায় বা কোর্টে মামলা করলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে তিনি মামলা করতে বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও সাহস পাননি।

স্থানীয়দের বক্তব্য

কামরাঙ্গীরচর নবীনগর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম, শাহাদাৎ, মুফাজ্জল হোসেন, আজিজ, আলামিনসহ অনেকেই জানান, তোফাজ্জল একজন সহজ-সরল ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০১৭ সালে পরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা চালিয়ে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়।
কারখানার বাড়িওয়ালা মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী শেফালি বেগম বলেন, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গেলেও হামলাকারীরা কিছুই শোনেনি।

কান্নাভেজা কণ্ঠে তোফাজ্জল

তোফাজ্জল হোসেন বলেন,
“চাঁদনী চক মার্কেটের ব্যবসায়ী নূর আলম, জনি ও বাবুর কাছে আমার পাওনা টাকা আছে। সেই টাকা চাওয়াই আমার অপরাধ হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তারা আমার কারখানায় হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে। ব্যবসা হারিয়ে আমি এখন অসুস্থ ও বেকার, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি আমার পাওনা টাকা এবং ক্ষতিপূরণ ফেরত চাই।”

অভিযুক্তদের বক্তব্য

চাঁদনী চক মার্কেটের অভিযুক্ত ব্যবসায়ী বাবু বলেন, তোফাজ্জল তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। টাকা পাওয়ার কথা আছে এবং তার ওপর হামলার ঘটনাও শুনেছেন। তবে লেনদেনের বিষয়টি দেখতেন নূর আলম। নূর আলম ও জনির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *