উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসছে না ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি

কামরুল ইসলাম:

দোহাজারী, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া রাস্তার মাথা এলাকা পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্পটে ট্রাফিক পুলিশের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চাঁদাবাজির কারণে সড়কে নিত্যদিন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, যা জনজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ভুক্তভোগী যানবাহনের চালক, মালিক ও যাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদা আদায় করছে। এতে সৃষ্ট হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। প্রতিদিন দিনে ও রাতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা এই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

গাড়িচালক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত একটি দল এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত আরেকটি দল দোহাজারী ও কেরানীহাট এলাকায় চাঁদাবাজির ‘দায়িত্ব’ পালন করছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখনও নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন। অনেকে মনে করছেন, উর্ধ্বতনদের ভাগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় তারা বিষয়টিকে ‘চুপচাপ’ দেখছেন।

এছাড়াও, কিছু স্থানে রাত ১১টার পরেও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, তারা প্রতিদিন রাত ১১টার দিকে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের রাস্তায় দেখেন, তবে আলোর মধ্যে নয়—অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রায় ৭/৮টি স্পটে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি প্রকাশ্যেই চলছে। প্রতিটি মোড়ে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই চোখে পড়বে অভিনব কৌশলে টাকা আদায়ের দৃশ্য। বৈধ বা অবৈধ—যেই গাড়ি আসুক না কেন, সিগন্যাল দেওয়া মানেই অর্থ আদায়। টাকা না দিলে ‘মামলা’ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ দোহাজারী ও কেরানীহাটের ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে বহুবার প্রকাশ পেয়েছে।

স্থানীয় এক বাসচালক ইউনুছ বলেন, “দোহাজারী ও কেরানীহাট স্টেশনে ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানেই টাকা দিতে হবে। না দিলে কোনো না কোনো অজুহাতে মামলা দিবে।” তিনি আরও বলেন, “কেরানীহাটে একদিন ট্রাফিক সার্জেন্ট (নেমপ্লেট ছাড়া) আমাকে সিগন্যাল দেয়। আমি তাকে বলি, বাসা কাছেই—কাগজ আনতে পারি। ১৫ মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে দেখি, সে ইতোমধ্যেই মামলা দিয়ে দিয়েছে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোহাজারীর এক ব্যক্তি বলেন, “দোহাজারী ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে চন্দনাইশ কলেজ গেইট থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে শুধু ট্রাফিক পুলিশ নয়, সোর্স সিন্ডিকেটও সক্রিয়। তারা সিএনজি চালকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ‘টোকেন’ নেন।”

একটি সূত্র জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়ালে সেটি ব্রেকারে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কেরানীহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে, যেখানে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিসি পর্যন্ত ভাগাভাগি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ)-এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।” তিনি আরো জানান, কতটি স্পটে ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে, তা তিনি নিশ্চিত নন।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ, প্রশাসন ও ট্রাফিক) বলেন, “আপনারা ছবি বা অভিযোগ পেলে নিউজ করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তাদের টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *