ওসি শিবিরুলের রহস্যজনক ভূমিকার প্রতিবাদে রেঞ্জ ডিআইজি অফিস ঘেরাও মানববন্ধন

শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:

“সত্য লেখা এখন অপরাধ? চাঁদাবাজি না করেও সাংবাদিককে চাঁদাবাজ বানানো—এটাই কি আইন?” রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে উত্তাল মানববন্ধনে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন স্থানীয় সাংবাদিক নেতা খায়রুল আলম রফিক।

রবিবার দুপুরে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনটি পরিণত হয় এক প্রতিবাদের মঞ্চে। শতাধিক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় একটাই স্লোগান—“মিথ্যা মামলা নয়, সত্যের জয় চাই!” ওসি’র রহস্যজনক ভূমিকা!

সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বিতর্কিত নেতা মনির চৌধুরী সাংবাদিক কামাল হোসেন–এর নামে “চাঁদাবাজি”র একটি মিথ্যা মামলা করেন। অথচ মামলাটি যাচাই–বাছাই না করেই কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম স্বপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর রেকর্ড করেন! একাধিক সূত্র দাবি করেছে—এফআইআর করার আগে-পরে “অর্থ লেনদেন”ও হয়েছে। কেউ কেউ সরাসরি বলছেন, “এই মামলাটা কোনো আইনি নথি নয়, এটা এক ধরনের চুক্তি—সত্যকে স্তব্ধ করার চুক্তি!”

ডিআইজির নাম ব্যবহার করে প্রতারণা

অভিযোগ উঠেছে, মামলার মূল হোতা মনির চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ডিআইজি আতাউল কিবরিয়ার নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। কারণ? দু’জনেরই বাড়ি সিলেট। এই সম্পর্কের সুযোগেই তিনি পুলিশকে প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সাংবাদিকরা যখন বিষয়টি সরাসরি ডিআইজি আতাউল কিবরিয়ার কাছে জানতে চান, তখন তিনি বিস্মিত কণ্ঠে বলেন—
“এই মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
আমার কোনো খালাতো ভাই নেই, কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে থাকে, সে প্রতারক।”

ডিআইজির এই বক্তব্যে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়—“তাহলে ওসি কেন এফআইআর করলেন? কাদের নির্দেশে?”

মনির চৌধুরী: ‘মামলাবাজের’ পরিচিত মুখ

তদন্তে জানা গেছে, মনির চৌধুরী অতীতে নিজ মেয়ের জামাই, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেও অন্তত ১০টির বেশি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন—“মিথ্যা মামলা আর হয়রানিই ওর পেশা!”

একজন প্রবীণ সাংবাদিক মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বলেন—“আজ কামাল, কাল আমিও হতে পারি। ওসি যদি টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকের নামে মামলা নিতে পারে, তবে এদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা মৃত!”

মানববন্ধনে সাংবাদিক সমাজের গর্জন

ময়মনসিংহের বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে একে একে মাইকে ওঠেন বক্তারা। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন জয়নাল আবেদীন, তাঁর কণ্ঠ কাঁপছিল ক্ষোভে—“একজন সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ মানে পুরো জাতির চোখ বেঁধে দেওয়া! সত্যের কলমকে যদি চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ন্যায়বিচার কোথায় দাঁড়াবে?”

এরপর সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক বলেন—“ওসি শিবিরুল ইসলাম আইনের পোশাক পরে প্রশাসনের নয়, অন্যের নির্দেশে কাজ করেছেন। আমরা তাকে দায়িত্ব পালনের বদলে দায়িত্ব বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত করছি!”

বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—“৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে সারা দেশে সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নামবে। কোতোয়ালী থানার সামনে থেকে শুরু হবে গণঅবস্থান।”

ডিআইজির কাছে সাংবাদিকদের স্মারকলিপি

মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক প্রতিনিধিদল ডিআইজি আতাউল কিবরিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং লিখিতভাবে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। ডিআইজি তাঁদের বলেন—“আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। তদন্ত করে দেখবো, আইনকে কেউ যেন নিজের স্বার্থে ব্যবহার না করতে পারে।”

জনমনে প্রতিক্রিয়া

ময়মনসিংহ শহরের সাধারণ মানুষও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক দোকানদার বলেন, “যে দেশে সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”

একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন—“মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক হয়রানি মানে রাষ্ট্রের চোখে কালো কাপড় বেঁধে দেওয়া।”

গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন—এটি শুধু সাংবাদিক কামাল হোসেনের মামলা নয়, এটি সত্য, সাহস ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এক প্রশাসনিক আক্রমণ। “এই অন্যায়ের জবাব আমরা আইনেই দেব, প্রতিবাদেই দেব, আর যদি প্রয়োজন হয়—কলম ছেড়ে রাজপথে দাঁড়াবো!”

এভাবেই শেষ হয় ময়মনসিংহের সেই উত্তাল মানববন্ধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *