আব্দুর রহমান, কক্সবাজার :
এলএনজি পাইপ চুরিতে ঠিকাদারি ভেন্ডার মারুফের গাড়ি ব্যবহার,
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা থেকে কোটি টাকা মূল্যের মূল্যবান মালামাল পাচারের সময় হাইওয়ে পুলিশের হাতে একটি মালবাহী লরি আটক হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মীর আক্তার কোম্পানির একজন ভেন্ডার, স্থানীয় চোর-ডাকাত এবং প্রকল্পের কিছু অসাধু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্মাণসামগ্রী চুরি করে আত্মসাৎ করছে।
আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) ভোর রাত ৪টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মালামাল বোঝাই গাড়িটি আটক করা হয়।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, আটককৃত লরিটি ছিল মীর আক্তার কোম্পানির পাথরের ভেন্ডার মারুফের মালামাল বহনকারী। অভিযোগ রয়েছে, মারুফ দীর্ঘদিন ধরে মামুন ও লিয়াকত সিন্ডিকেটের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করে আসছেন। স্থানীয়দের দাবি, বেশিরভাগ বড় চোরাচালান মারুফের গাড়িতে করেই পাচার করে লিয়াকত সিন্ডিকেট। তার সাথে মাতারবাড়ী ও কালারমারছড়া আফজলিয়া পাড়া এলাকার কিছু চিহ্নত ডাকাত ও সন্ত্রাসী এ সিন্ডিকেটে সক্রিয় সদস্যা। এরা চোরাই মাল বের করে নিতে পাহারা দেয়।
পাথরবাহী এই গাড়ির আড়ালে মাতারবাড়ী পশ্চিমের হাসের চর দ্বীপের এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান পাইপ, স্ক্র্যাপ ও সিটসহ বিভিন্ন সরকারি সরঞ্জাম চুরি করা হচ্ছিল। ঢাকার বাসিন্দা মারুফ টেন্ডারের মাধ্যমে স্ক্র্যাপের মালামাল নেওয়ার আড়ালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মাতারবাড়ী বন্দরের আশেপাশের অফিস বা গোডাউন থেকে মালামাল চুরি করে পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চুরির কাজে জড়িত সিন্ডিকেটটি প্রকল্পের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ম্যানেজ করে চোরাই মাল সহজে প্রকল্প এলাকা থেকে বের করে নেয়।
বারবার ধরা ছোয়ার বাহিরে মূল হোতারাঃ
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুরির ঘটনায় মামলা হলেও বরাবরের মতো মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাহিরেই থেকে যান। কিছুদিন আগে পেকুয়ায় উক্ত ভেন্ডারের আরেকটি গাড়ি আটক হলে দায়েরকৃত মামলায় লিয়াকত ছিলেন ১ নম্বর আসামি। এতে প্রমাণিত হয় যে, জাল চালান তৈরি ও মালামাল পাচারে লিয়াকত সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
কোম্পানির বক্তব্যে অসঙ্গতি
পাথর ভেন্ডার মারুফের সহকারী হিসাবরক্ষক মিরাজ প্রথমে টেন্ডারের মাধ্যমে মালামাল সংগ্রহের দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি এবং পরে যোগাযোগ এড়িয়ে চলেন। ভেন্ডার মারুফ নিজেও ফোন ধরেননি। তবে মীর আক্তার কোম্পানির পিএম আবু সাদাত সায়েম স্পষ্ট জানিয়েছেন, “পাথর আমরা বিক্রি করেছি। তবে এলএনজি পাইপ, স্ক্র্যাপ বা কোনো সিট বিক্রি করিনি।” এই বক্তব্য সরকারি সম্পদ চুরিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগকে জোরালো করেছে।
আইনগত পদক্ষেপের প্রক্রিয়া
পটিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জসিম জানান, ভোররাতে আটক লরিতে থাকা মালামালের বৈধ কাগজপত্র বা চালান দেখাতে না পারায় গাড়িটি মালামালসহ থানায় জব্দ করা হয়েছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক জানিয়েছেন, চোরাই পথে মালামালগুলো কিভাবে সরানো হলো, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ী বন্দরের ক্যাপ্টেন আতাউল জানান, এলএনজি পাইপসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থা অভিযোগ দিলে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
এলাকার সচেতন মহল এই কোটি টাকার সরকারি সম্পদ চুরি ও পাচারকারী সিন্ডিকেটকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।