মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:
মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার একজন সাধারণ ঔষুধ কর্মচারী থেকে গড়ে ওঠা পল্লী চিকিৎসক নির্মল কুমার দাস-এর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি ‘দৈনিক স্বাধীন সংবাদ’-এ সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও দৃশ্যমান আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
নির্মল কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজেকে “এমবিবিএস” ও “শিশু বিশেষজ্ঞ” পরিচয়ে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে রোগীদের বোকা বানিয়ে অনুমোদনহীন চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তার চিকিৎসার কারণে শিশুমৃত্যু, শারীরিক নির্যাতন, অনুমোদনহীন ঔষধ প্রয়োগ, রোগীদের ভিডিও ধারণ, কখনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কখনো আবার প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েডসহ ৫০–৬০ নাম্বারের ঔষধ বিক্রি সহ একাধিক রোগীর প্রতি ভয়ঙ্কর চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় তিনি ঘিওরের একটি ফার্মেসিতে ভভানি ভোজের কর্মচারী ছিলেন। পরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পল্লী চিকিৎসক কোর্স সম্পন্ন করে নিজেকে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত করা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বিল্ডিং-এর মালিক এবং কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী, যা নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন।
একের পর এক অভিযোগ
-
অনুমোদনহীন ইনজেকশন প্রয়োগ
-
উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার
-
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঔষধ বিক্রি, আবার কখনো প্রেসক্রিপশন দিয়ে চিকিৎসা
-
রোগীর ভিডিও ধারণ
-
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতারণা চালিয়ে যাওয়া
-
রোগী বা অভিভাবকদের উপর শারীরিক হামলা
-
শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
ঘিওরের বাইলজুরি গ্রামের স্বপ্না আক্তার অভিযোগ করেন, আনুমানিক তিন বছর আগে আমার ১৩ মাস বয়সী মেয়ে “মায়া” নির্মল কুমার দাসের ভুল চিকিৎসায় ঐ রাতেই মৃত্যু হয়। পরে থানায় অভিযোগ দিলেও দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। উপজেলার আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলে আমার নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা কেটে নিলেও আমরা নির্মল কুমার দাসের সঠিক বিচার পাইনি।
একইভাবে রাজু আক্তার অভিযোগ করেন, ২০২৫ সালের ২৮ আগস্ট আমার এক বছরের শিশুকে চিকিৎসা করাতে গেলে নির্মল কুমার দাসের টেবিলে প্রস্রাব করার ঘটনায় আমাকে অপমানিত করেন। পরে তিনি আমাকে মাথায় ঘুষি মারেন, চুল ধরে টেনে মারধর করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি জানতাম তিনি এমবিবিএস ডাক্তার, এখন শুনছি কোন লাইসেন্স নেই। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
নিম্নমানের ঔষধ, কোম্পানিকে জিম্মি করা
অভিযোগ রয়েছে, তিনি ৫০–৬০ নাম্বারের নিম্নমানের ঔষধ কোম্পানির পণ্য বিক্রি করেন। সেলসম্যানদের কমিশনের লোভে ‘জিম্মি’ করে রেখে কোম্পানি থেকে অনারিয়াম গ্রহণ করেন।
ঘিওর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ কোহিনুর মিয়া বলেন, “তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ হাসিব আহসান জানিয়েছেন, তিনি পল্লী চিকিৎসক নির্মল কুমার দাসের ভুয়া চিকিৎসক প্রদানের বিষয়ে অবগত, কিন্তু নিজেকে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ.কে.এম. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, “আপনি আমাকে মেইল পাঠান, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, “পল্লী চিকিৎসক একজন বিএ পাশ মানুষ, সে কিভাবে কোটি টাকার মালিক! রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তিনি জনগণকে বছরের পর বছর প্রতারণা করে যাচ্ছেন।”
জনসাধারণের দাবি, বারবার ‘দৈনিক স্বাধীন সংবাদ’-এ নিউজ প্রকাশ এবং ভুক্তভোগীর অভিযোগ সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরবতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে পল্লী চিকিৎসক অনুমোদনহীন চিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কার্যকর নয়।
দুদক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসন যেন দ্রুত তদন্ত করে নির্মল কুমার দাসের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে—এটি এখন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের দাবিই।