চট্টগ্রাম বায়েজিদে ‘বাম্পার গ্রুপ’-এর ত্রাস, আরফিন গেট বিশ্ব কবরস্থান এলাকায় একাধিক মামলা থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা, উল্টো ভুক্তভোগীকেই আসামি, প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা

মোহাম্মদ সোহেল:

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বায়েজিদ রিং রোডের আরফিন বিশ্ব কবরস্থান এলাকায় ‘বাম্পার গ্রুপ’ নামে পরিচিত একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিলকিছ আক্তার ও পারভিনের নেতৃত্বে এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ভয়ভীতি, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিযুক্ত বিলকিছ আক্তার ও পারভিন অতীতে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত। জুলাই আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তারা এখনো প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক মামলা, তবু গ্রেপ্তার নেই
এলাকাবাসীর দাবি, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে কি এখনো রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবই আইনের ঊর্ধ্বে?

মাদক ব্যবসা ও প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ
অভিযোগ রয়েছে, ‘বাম্পার গ্রুপ’ ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, নিয়মিত ‘সাপ্তাহিক খরচ’ দেওয়ার মাধ্যমে তারা পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে চলে।

নারীকে নির্মম হামলা, উল্টো তাকেই গ্রেপ্তার

সম্প্রতি ওই এলাকার বাসিন্দা মর্ণিকা আক্তারের বসতঘরে বিলকিছ আক্তারের নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলাকারীরা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় এবং মর্ণিকা আক্তারকে নির্মমভাবে মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তবে ঘটনার পর মামলা প্রক্রিয়াকে ঘিরে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী মর্ণিকা আক্তার বায়েজিদ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে উল্টো অভিযুক্ত বিলকিছ আক্তারকে বাদী করে মর্ণিকার বিরুদ্ধে মামলা নেয় এবং তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অথচ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ‘বাম্পার গ্রুপ’-এর কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।

আতঙ্কে এলাকাবাসী, ঊর্ধ্বতন হস্তক্ষেপ দাবি
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—একাধিক গুরুতর অভিযোগ ও মামলা থাকার পরও অভিযুক্তরা কীভাবে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালায়?
এলাকাবাসী দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং বায়েজিদ এলাকার আরফিন বিশ্ব কবরস্থান সংলগ্ন অঞ্চলে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *