চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ দাবি, কচুয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে  নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার :
চাঁদপুরের কচুয়ায় ১৯নং হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হাওয়া বেগমের বিরুদ্ধে ভর্তি ও সার্টিফিকেট বানিজ্য, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ের পানির ট্যাংকি ও সোলার প্যানেল আত্মসাৎসহ নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী,অভিভাবক এবং এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
সরেজমিনে জানাযায়, হাওয়া বেগম ২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই হরিপুুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ইংরেজী উচ্চারনে ভুল, অংকে দূর্বলতা, এমনকি বাংলা উচ্চারন ও লেখায় তার ভুল হয়।
শিক্ষার্থীদের সাথে বদমেজাজী ভাবে কথা বলেন। আচরনগত দিক শুধু শিক্ষার্থীই নয় অভিভাবক এবং তার বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের সাথেও তিনি বদমেজাজী।
এসবের মধ্যেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে যাওয়ার পর তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি বৈষম্য করে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব না দিয়ে হাওয়া বেগমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিগত ১২/১৩ বছর তার খেয়াল খুশী মতো বিদ্যালয়ে আসতেন এবং যেতেন। বিদ্যালয়ে না যেয়ে বাড়িতে থেকে বলতেন স্কুলের কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আছি। বিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান না থাকায় এবং নানান দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করে। যার ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যত্রে ভর্তি করায়। তিনি প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদানকালে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে ২০২৪ সালে ১৫০ জন। যা অর্ধেকের চেয়েও কম।
প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালীন সময়ে বিএনপি করে এমন একজন ব্যক্তির ভাতিজিকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চাইলেও তাকে ভর্তি করানো হয়নি।
শিশু শ্রেণি থেকে ৫০ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হাওয়া বেগমেেক টাকা দিতে হতো। স্কুলের বিভিন্ন পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হওয়ার পর সার্টিফিকেট বাবদ ৫’শ টাকা করে আদায় করেন। ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেন। হাওয়া বেগমের বিরুদ্ধে স্কুলের একটি পানির ট্যাংক, একটি সোলার প্যানেল আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। স্লিপের টাকা স্কুলে বরাদ্ধ হলে ভুয়া ভাউচার জমা দিয়ে বিগত ১০/১২ বছরের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনশেড ভবনটি তার সহযোগিতায় নামকাওয়াস্তের টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ বিদ্যালয়ের কাজে না লাগিয়ে তার বাড়িতে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন, বিদ্যালয়ের মাঠ ভরটসহ বিদ্যালয় সংস্কার ও উন্নয়ন খাতের বরাদ্ধকৃত অর্থের যথাযথভাবে কাজ না করে দায়সারা কাজ করে টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন। ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর এইচপিভি টিকার জন্য বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির (বালিকা) শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১’শ টাকা করে আদায় করেন।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নেহাল আহমেদ ও ইয়াছিন এর মা রিনা আক্তার বলেন, আমার দুই ছেলে ২০২২ ও ২০২৩ সালের ৫ম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করেন। তাদেরকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট আনতে হরিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাওয়া বেগমের কাছে যাই। প্রধান শিক্ষক আমার দুই ছেলের সার্টিফিকেটের জন্য ৫’শ টাকা করে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। অনুরোধ করে বলি আমি গরীব মানুষ টাকা দিতে পারবনা। তখন সে আমাকে ধমকিয়ে বলে টাকা না থাকলে সার্টিফিকেটও দিবনা। আমাকে ধমকিয়ে বিদায় করেন। পরে আমি বাড়িতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে ৪’শ টাকা ধার করে এনে দিলে তিনি আমাকে এক ছেলে নেহালের সার্টিফিকেট দেয়। আরেক ছেলে রায়হানের সার্টিফিকেট দেয়নি। সার্টিফিকেট না দেয়ায় তাকে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করতে পারিনি।
২০২৩ সালের ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তারের মা শাহানাজ বলেন, আমার মেয়ের সার্টিফিকেট আনতে প্রধান শিক্ষক হাওয়া বেগমকে ৫’শ টাকা দিয়েছি।
৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থী তাসনিন জাহানের মা লাভলী আক্তার বলেন,আমার মেয়েকে ভর্তির সময় হাওয়া বেগমকে ২৫০ টাকা দিয়েছি। সার্টিফিকেট আনার সময় ৩’শ টাকা দিয়েছি। আমার মেয়ের নামে উপবৃত্তির টাকা হওয়ার পরও দেয়নি।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হাওয়া বেগম ভর্তিতে ও সার্টিফিকেট প্রদানে টাকা নেয়ার কথা অস্বিকার করে বলেন, স্কুলের সোলার প্যানেল ২টি ছিল এবং পানির ট্যাংক ৩টি ছিল আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *