মোঃ মাহমুদুল হাসান:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে আব্দুল হাকিম পিন্টু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের পাশাপাশি প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
রোববার ২ মার্চ সকাল ১১:৩০ মিনিটের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নবাসীর আয়োজিত মানববন্ধনে নিহত পিন্টুর স্ত্রী,মেয়ে ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ দাবি জানান।
নিহত আব্দুল হাকিম পিন্টুর স্ত্রী মোসাঃ পারভীন বেগম বলেন,চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর আলী,চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি মাদকের গডফাদার নুরুল ইসলাম ও মাদক সম্রাট জুয়েল রানা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন করেছে। তাঁরা আমার শ্বশুর মোঃ হুমায়ুনকে প্রভাবিত করে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে নিরপরাধ মানুষকে মামলায় জড়িয়েছে। শ্বশুর আমার স্বামীর লাশ নিয়ে ব্যবসা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পারভীন বেগম আরও বলেন,আমার স্বামী মাদকের বিরুদ্ধে ছিল। সে পুলিশ এবং র্যাবকে অবৈধ মাদক সংক্রান্ত অনেক তথ্য দিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করতে সহায়তা করতো। এই বিষয় নিয়েই মাদক কারবারি নুরুল ও জুয়েল সিন্ডিকেট আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
তার দাবি,আমি এখন আমার স্বামীর খুনিদের চিনতে পেরেছি। আমি দ্রুত প্রকৃত আসামিদের দিয়ে আদালতে মামলা করবো। আশা করি পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে আমার স্বামী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করবে। পুলিশ প্রশাসন যেন আমার স্বামীর প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করেন।
নিহত পিন্টুর মেয়ে মোসাঃ সীমা খাতুন তাঁর বক্তব্যে বলেন,আমার বাবাকে যারা মেরেছে তাদের বিচার চাই। মাদক কারবারি নুরুল,জুয়েল,মতি এরাই আমার বাবাকে মেরেছে। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার চাই।
কীটনাশক ব্যবসায়ী শাকিল আহম্মেদ বলেন,কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত,পুলিশ ভালো জানে। নিহত পিন্টু পুলিশ ও র্যাবের সোর্স ছিল। মাদক ব্যবসার গডফাদাররা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। এই পিন্টু মাদক ব্যবসায়ী নুরুল ও জুয়েলকেও ধরিয়ে দিয়েছিল। তারাই পিন্টুকে খুন করে থাকতে পারে। কিন্তু এই মামলায় অন্যায়ভাবে ইউপি চেয়ারম্যান টিপু ,অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আশরাফুল মাস্টার ও আজিজুল ইসলামসহ অনেক নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। আমরা আশরাফ মাস্টারের মুক্তি চাই। এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাঁদের গ্রেপ্তার চাই।
টিপু সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ বলেন,টিপু সুলতান কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সাহারুল ইসলাম কালুকেও পিন্টু হত্যা মামলা জড়ানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। একজন শিক্ষক এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ৯৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আশরাফুল ইসলামকেও এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। তদন্ত করে এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
মানববন্ধনে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি নিহত পিন্টুর বাবা বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক পক্ষ ফাঁসানোর অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ওই মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিদ রানা টিপু,অপসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আশরাফ মাস্টার,কলেজশিক্ষক শাহারুল ইসলাম কালু ও ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলামসহ নিরাপরাদ অনেককেই আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য,১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আব্দুল হাকিম পিন্টুকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে ২৩ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।