জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার: চাকরিচ্যুত মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সংযুক্ত কলেজসমূহ এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে চাকরিচ্যুত মামুনুর রশিদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে। তদন্তে উঠে এসেছে, অর্থ তসরুপ ও দুর্নীতির দায়ে ২০০৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউডি (UD) পদ থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পরও তিনি আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক প্রভাব বিস্তার করছেন এবং ভিসির (VC) নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
২০০৮ সালে চাকরি হারানোর পর মামুনুর রশিদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একটি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নং: ২৯(৭)১৯ দায়ের হয়। এরপরও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১২ সালে তিনি যৌথ মালিকানায় “ক্রাউন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি” প্রতিষ্ঠা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় কোনো জটিলতা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি মহাখালী থেকে খিলক্ষেতে স্থানান্তর করা হয়।
PIANU — Professional Institute Association of National University — এর সভাপতি পরিচয় ব্যবহার করে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরকে নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে বিভিন্ন কলেজ ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি করেন তিনি। ব্যাপক অভিযোগ ও সমালোচনার মুখে অনুষ্ঠানটি বাতিল হয় এবং পরে সংগঠন কর্তৃপক্ষ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “জুলাই বিপ্লব ও ৫ আগস্টের ঘটনার পর দলীয় পরিচয় পাল্টে বিএনপি পরিচয় ব্যবহার শুরু করেছেন তিনি। বর্তমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের সঙ্গে একান্ত সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সফর সঙ্গী হয়ে বিভিন্ন কলেজ পরিদর্শন করছেন। এসব পরিদর্শনের সময় ভিসির নাম ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অন্য এক কলেজ অধ্যক্ষ বলেন—
“ভিসির প্রভাব দেখিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে স্বেচ্ছাচারী প্রভাব বিস্তার করছেন। এমনকি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হয়েও তিনি কলেজ অনুমোদন, নতুন বিষয় খোলা, কমিটি গঠন এবং কলেজ পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করছেন — যা আইন ও নীতিমালার পরিপন্থী।”
অধ্যক্ষদের দাবি, তার প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অবকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও এলএলবি ও বিএড কোর্স অধিভুক্ত হয়েছে — যা প্রভাব ব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণ।
অভিযোগ উঠেছে—
মামুনুর রশিদ নিজেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের “সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র” হিসেবে প্রচার করছেন এবং সবাইকে জানাচ্ছেন—
“ভিসি এখন আমার পকেটে, আমি যা বলি তাই হয়, কলেজ পরিদর্শক পদ থেকে শুরু করে নতুন অনুমোদন—সব এখন আমার হাতে।
মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে PIANU-র নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( PIANU) এর বর্তমান কমিটি নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যম কে বলেন, মামুনুর রশিদ সাহেব এখনো নিজেকে (PIANU) সভাপতি পরিচয় দেয়, সেটি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে থাকে। আমরা দেখছি তিনি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাচ্ছেন, এবং তিনি বিভিন্ন বিষয় অনুমোদনের নাম করে অর্থ ( চাঁদা) দাবি করছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন আমাদের।
এ বিষয় জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ–র মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
উক্ত অভিযোগের বিষয় মামুনুর রশিদ বলেন,,PIANU সভাপতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি নির্বাচিত সভাপতি, PIANU এর বর্তমান কোনো কমিটি নেই, নির্বাচন প্রক্রিয়াধীন, সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি বিষয় জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ২০০৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি, আপনি যা বলছেন সেগুলো ভুয়া।
ভিসি স্যারের সফরসঙ্গী ও প্রতিষ্ঠান অনুমোদন সহ বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিসি স্যার মাঝেমধ্যে প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানি দেখে, বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যায়, কারণ প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমি পড়াশোনা করি সবাই তো পড়াশোনা করে না।
রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি চলমান রয়েছে আদালতে ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী, পেশাজীবী সংগঠন এবং কলেজ প্রশাসন মহলে এই বিষয়গুলো ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সচেতন মহলের মন্তব্য—
“অভিযোগগুলো সত্য হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তার জন্য বড় ধরনের সুনামহানি ও প্রশাসনিক সংকট তৈরি হতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *