আলমাস হোসাইন:
ঢাকার আশুলিয়ায় গর্ভবতী নারী শ্রমিক তানজিমা খাতুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কানাডিয়ান মালিকানাধীন তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গিল্ডেন গ্রুপের তিনটি কারখানায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে তানজিমা খাতুনের মৃত্যুর প্রতিবাদে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় অবস্থিত গিল্ডেন অ্যাক্টিভ ওয়্যার বিডি লিমিটেড এবং জামগড়ার নোভাস গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে নামেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তানজিমা খাতুন (২৫)। তিনি আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকার এসডিএস ইন্টারন্যাশনাল কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহত তানজিমা যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার আড়পাড়া গ্রামের আব্দুল গফফারের মেয়ে।
অবহেলার অভিযোগ
শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গর্ভবতী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তানজিমা প্রথমে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু অনুমতি না পেয়ে কোম্পানির নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে স্বাস্থ্য সহকারী তাকে বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাহিরে চিকিৎসা নিতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়। এ সময় তানজিমা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক সহায়তা চান, কিন্তু তাকে তা দিতে অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সহকর্মীদের সহায়তায় তানজিমাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে শ্রমিক ও কর্মচারী নিজেরাই চাঁদা তুলে সহযোগিতা করার চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ সেই উদ্যোগেও বাধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পরিবার ও সহকর্মীদের ক্ষোভ
নিহতের দেবর পারভেজ অভিযোগ করে বলেন,
কোম্পানি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই আমার ভাবির মৃত্যু হয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আমার ভাবির মতো আর কোনো শ্রমিককে প্রাণ দিতে না হয়।
অন্যদিকে শ্রমিকরা দাবি করেছেন, গিল্ডেন গ্রুপের কারখানাগুলোতে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত বিদেশি কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। তারা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা, অযৌক্তিকভাবে লাগাতার ছাঁটাইসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বলেন,
আমাদের সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে অবহেলা করা হয়েছে। অসাধু ও বর্ণবৈষম্যে কারি বিদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে যাব।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ
এ ঘটনায় শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনী কারখানা এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ জানায়, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।
একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর কারখানাগুলোর পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলেও শ্রমিকদের মধ্যে এখনও ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।