এইচ এম হাকিম:
কেরু চিনিকলে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ৮৮তম আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু
দেশের ঐতিহ্যবাহি চিনিকল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী প্রায় ৬৪ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ৮৮তম আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার সময় চিনিকলের কেইন কেরিয়ারে আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এর আগে মিলের কেন কেরিয়ার প্রাঙ্গণে চলতি আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় শিল্প উপদেষ্টা বলেন, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কেরু চিনিকল সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এর জন্য যা যা করার তার সবই করবে সরকার। তিনি মিলের কর্মকর্তা কর্মচারী ও আখ চাষীদের নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য এবং দেশের স্বার্থে অবদান রাখতে অনুরোধ করেন। সরকারের গোডাউনে যতদিন দেশী চিনি থাকবে ততদিন কোন চিনি আমদানি করা হবে না। দেশী চিনি টিসিবি’র মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হবে। চিনিকলে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। এসময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পরিচালক (ইক্ষু উন্নয়ন ও গবেষণা) আব্দুল আলীম খান প্রমুখ।
কেরু চিনিকলের দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা এক হাজার ১১৫০ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাড়াই মৌসুমে ৭২ মাড়াই দিবসে ৭৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চার হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবং চিনি আহরনের হার ৫ দশমিক ৬ ভাগ নির্ধারণ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৪ মাড়াই দিবসে ৭২ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। মিল চালুর পর থেকে গত মৌসুম পর্যন্ত মোট ৮৮টি মাড়াই মৌসুমে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৩৪৫ টাকা।
প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিলহাউজে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে চিনিকলটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এতে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়বে। তবে এলাকায় আখ চাষ ক্রমাগত কমতে থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহি এই চিনিকলটি। চাষীদের দাবীর প্রেক্ষিতে মৌসুমে আখের ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার প্রতিমণ (৪০ কেজি) আখের মূল্য ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চিনির মূল্য বাড়লেও আশানুরূপ হারে আখের মূল্য বাড়েনি। আখের মূল্য আরও বাড়ানোর দাবি আখ চাষীদের।
মিলজোন এলাকায় এবার দণ্ডায়মান আখ রয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১৬১৫ একর এবং চাষীর জমিতে ৩৯৩৭ একর জমি রয়েছে। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
সর্বোচ্চ আখ উৎপাদন করায় ইসমাইল হোসেন, মজিদ মোল্লা, বকুল হোসেন এবং একর প্রতি সর্বোচ্চ আখ উৎপাদনকারী হিসাবে শামীম হোসেন, মোমিনুল হক, গোলাম সরোয়ার ও শাহ রকিবুল হাসানকে কেরু চিনিকলের পক্ষ থেকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।