নতুন সম্ভাবনার আলোয় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার

মোছাঃ মাহমুদা আক্তার নাঈমা :

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উন্নতি প্রসঙ্গ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও আলোচনার শেষ নেই।নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি লাইব্রেরিটি।প্রায় এগারো হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহার করেন না গড়ে একশ জনও। এর জন্য বই সংকট, অপ্রাসঙ্গিক ও পুরোনো সংস্করণের বই, অপর্যাপ্ত ফ্যান, লাইট, দুর্বল ওয়াইফাই সংযোগ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিবর্তনের উদ্যোগ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচতলা ভবনের মধ্যে তিন তলা পর্যন্ত লাইব্রেরি কার্যক্রম থাকলেও প্রতিটি ফ্লোরে তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষার্থীকে পড়তে দেখা যায়। অনেক টেবিলে বই ছড়ানো, বাতি ও ফ্যান নষ্ট অবস্থায় আছে। পুরো লাইব্রেরীতে ওয়াইফাই সংযোগ বা ই-লাইব্রেরীর ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহা. আজিজুর রহমান বলেন, “লাইব্রেরিতে ইতোমধ্যেই দুই হাজারের বেশি নতুন বই আনা হয়েছে। স্মার্ট কার্ড ও RFID প্রযুক্তি চালুর কাজ চলছে। এ বছর থেকেই RFID মেশিন ব্যবহার শুরু হবে এবং এসি সংযোজনের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।”
তিনি জানান, “সাপ্লিমেন্টারি জেনারেটর সংযোজন, লাইট-ফ্যান মেরামত এবং পর্দা স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ প্রক্রিয়াধীন।”

ওয়াই-ফাই নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ICT সেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফান্ডের সংকট থাকায় এখনো রাউটার চালু করা যায়নি। তবে শিগগিরই কার্যকর হবে।”

কিন্তু লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠকদের অভিযোগের অন্ত নেই। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. এনামুল হক ইমন বলেন, “বই আছে, তবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, সাময়িকী কিংবা সমসাময়িক প্রকাশনার অভাব রয়েছে। অনলাইনে তথ্য খোঁজা বা অ্যাসাইনমেন্টের সময় দুর্বল ওয়াই-ফাই সমস্যায় ফেলছে।”

ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদুল হাসান নিলয় জানান, “লাইব্রেরিতে ক্যান্টিন সুবিধা নেই। আর কার্ড না থাকায় বই ইস্যু করার সুব্যবস্থাও নেই।”

আরেক শিক্ষার্থী ইফফাত মুশতারী পুনম বলেন, “শুধু বই থাকলেই হবে না, কেন পড়া দরকার এবং বই পড়ে কীভাবে সৃজনশীল হওয়া যায়, এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো উচিত।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক ড. আজিজুর রহমান বলেন, “লাইব্রেরি প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা হয়। তবে শিক্ষার্থীরাই অনেকে জায়গায় জায়গায় খাবারের মোড়ক ফেলে রাখেন। আমাদের স্টাফরা নিয়মিত সেগুলো পরিষ্কার করেন।”

শিক্ষার্থীদের অরণ্য ও বই বিহঙ্গের মতো ‘বিকল্প পাঠাগারের প্রতি ঝুঁকে পড়া’র অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, “কখনোই না। আমাদের দ্বিতীয় তলায় প্রতিদিন একদল শিক্ষার্থী জব ও একাডেমিক পড়াশোনা করে। আসলে শিক্ষার্থীদেরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে লাইব্রেরিমুখী হতে হবে।”

গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জুলাই কর্ণার, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত প্রতীকী চিত্র ও ইতিহাস সংগ্রহে রাখা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। সব মিলিয়ে, অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য বয়ে আনছে আশার বার্তা। গ্রন্থাগারিক ড. মোহা. আজিজুর রহমান বলেন বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা যেন লাইব্রেরিকে তাদের সৃজনশীলতার কেন্দ্র বানায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *