শ্রীগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার শ্রীগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, সরকারি বিধি উপেক্ষা করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন এবং এর মাধ্যমে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। তবে এই আয়ের বিপরীতে তিনি সরকারকে যথাযথ আয়কর দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, নাসিরনগর শহরে অবস্থিত “সুনীল ক্যাডেট কোচিং সেন্টার”-এর প্রকৃত মালিক প্রধান শিক্ষক আনিসুল ইসলাম নিজেই। যদিও কাগজে-কলমে অন্য কারও নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেলেও বাস্তবে কোচিং সেন্টারের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক লাভ তিনিই ভোগ করছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই কোচিং সেন্টারে নিয়মিতভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ফি বাবদ উল্লেখযোগ্য অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। অভিভাবকদের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থীসংখ্যা বিবেচনায় কোচিং সেন্টার থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েও আনিসুল ইসলাম কোচিং বাণিজ্যে সরাসরি যুক্ত থাকায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরোক্ষভাবে কোচিংয়ে যেতে উৎসাহিত করা হয় বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,
“আমি অল্প কয়েকজন ছাত্র নিয়ে কোচিং করাই। ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার বেশি থাকে না।”

আয়কর প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“অনেকে তো কোচিং করিয়ে কর দেয় না। আমি একা কেন দেব?”

তবে স্থানীয়দের দাবি, প্রধান শিক্ষক যে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছেন তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের মতে, কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীসংখ্যা ও ফি কাঠামো বিবেচনায় মাসিক আয় কয়েক হাজার টাকা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ফলে প্রধান শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে আয়ের তথ্য গোপন করছেন বলেই তারা মনে করেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিজীবী শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্যিক কোচিং পরিচালনা করতে পারেন না। পাশাপাশি, যেকোনো বৈধ আয়ের ক্ষেত্রে আয়কর প্রদান করা আইনগত বাধ্যবাধকতা।

এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কেউ সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না হলে শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *