স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় এক সহকারী প্রাথমিক শিক্ষিকাকে হয়রানি, অশালীন আচরণ এবং ঘুষ গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ইসহাক মিঞার বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী শিক্ষক বর্তমানে চরম আতঙ্ক ও চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার শ্রীঘর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে তার সহকর্মী নুরুননাহার নামের আরেক শিক্ষিকার দীর্ঘদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আনিসুল ইসলামের শরণাপন্ন হন। তবে প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি এ বিষয়ে বিচার করতে পারবেন না এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর তাকে স্বামীসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে বিষয়টি উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অভিযোগকারী শিক্ষক স্বামীসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইসহাক মিঞা তাদের সঙ্গে ধমকপূর্ণ আচরণ করেন এবং স্বামীকে সঙ্গে আনার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর তাকে একটি চিঠি দিয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সহকর্মীর সঙ্গে বিরোধের কারণ লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর লিখিত জবাব দিতে গেলে শিক্ষা অফিসার তার আগস্ট মাসের এম.আর-এ স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। অভিযোগকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সন্তানের মৃত্যুজনিত মানসিক বিপর্যয়ের কারণে স্বাক্ষর করতে ভুলে গিয়েছিলেন, যদিও হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি ছিল। এ সময় শিক্ষা অফিসার তাকে বিভাগীয় মামলার ভয় দেখান এবং বিষয়টি থেকে রেহাই পেতে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
পরবর্তীতে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে তিনি নির্ধারিত ১০ হাজার টাকা শিক্ষা অফিসারের হাতে প্রদান করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তবে অর্থ প্রদানের পরও তার বিরোধ বা প্রশাসনিক জটিলতার কোনো সুরাহা হয়নি।
এরপর ২৫ ও ২৬ অক্টোবর শিক্ষা অফিসারের পিএস মনিরের সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগের পর তাকে নিরবে একা অফিসে আসতে বলা হয়। ২৭ অক্টোবর একটি কৈফিয়ত তলব করা হয়, যেখানে অভিযোগ করা হয় তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগকারী এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, একই দিন সন্ধ্যায় অফিসে গেলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবারও তাকে চাপ প্রয়োগ করেন এবং বিষয়টি “নিষ্পত্তি” করতে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে সময় দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামানকে জানানো হলে তিনি কোনো ধরনের ঘুষ না দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ৩০ অক্টোবর অভিযোগকারী শিক্ষক কৈফিয়তের লিখিত জবাব দাখিল করেন।
বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে ভীত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। একা ও নিরবে সন্ধ্যায় অফিসে আসার নির্দেশনা এবং চাকরি নিয়ে হুমকির কারণে পাঠদানকালীন সময়েও তিনি চরম আতঙ্কে থাকেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
নাসিরনগর সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমতা করনের বিল পাস করার নামে ৪২ জন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রতি জন থেকে ১২ হাজার টাকা করে মোট ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন।
শিক্ষা অফিসার ইসহাক মিয়া মনির নামে একজনকে তার পিএস হিসেবে নিয়োগ দেন, যার বেতন যোগায় ১২৬ জন প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার অফিসের সাইনবোর্ড বানানোর জন্য ১২৬ জন প্রধান শিক্ষক থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা নেন।
নাসিরনগর উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়—আশুরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৈতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে ব্যাংক চেক নিয়ে যান এবং নিম্নমানের কাজ করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযোগকারী শিক্ষক নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।