নির্বাচনে বিশৃঙ্খলাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

উপদেষ্টা জানান, সভায় মূলত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের শান্তি ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নির্বাচনের জন্য পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনা

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন কোনো আইন বহির্ভূত কাজ না করেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্তসংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

উপদেষ্টা জানান, প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশব্যাপী ২৮টি ব্যাচে তিনদিনের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে ১৩০টি ভেন্যুতে। ইতিমধ্যেই একটি ব্যাচের ৬,৫০০ জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলমান। পুলিশের চূড়ান্ত (৪র্থ পর্যায়ের) নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে।

আনসার-ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রস্তুত করা হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার সদস্যকে অস্ত্রসহ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার সদস্যকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য ৩,১৫৭ জন রিক্রুট সিপাহিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

উপদেষ্টা আরও জানান, এবারের নির্বাচনে বিজিবির ১,১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ইতিমধ্যেই ৬০% প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। মোটামুটি ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নজরদারি

তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ক বিরোধ এবং অন্য কোনো বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া সকল নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে, যাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি না থাকে।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল আগের তুলনায় কমে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক বাহক এবং গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি মনিটরিং এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *