স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যারা বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে বা বয়কটের পরিকল্পনা করছে, তারা নিজেরাই ভবিষ্যৎ রাজনীতি থেকে মাইনাস হয়ে যাবে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সুযোগ নেই
তিনি বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকার কিংবা বিএনপির মধ্যে কোনো শঙ্কা বা সংশয় নেই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই। তবে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে এটি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু যারা বয়কটের পথে হাঁটবে, তারা শেষ পর্যন্ত নিজেরাই রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইনাস হয়ে যাবে। আমি আশা করি, কোনো দল এ ধরনের আত্মঘাতী ঝুঁকি নেবে না।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সবসময় জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে এসেছে। এজন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে দেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা বিএনপির। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে এবারের নির্বাচন হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পিআর ও গণপরিষদের দাবি কৌশল মাত্র
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) বা গণপরিষদ ব্যবস্থার দাবি তুলছে, এটি মূলত মাঠ গরম রাখার একটি রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের দাবি বাস্তবসম্মত নয় এবং জনগণও সেটি মেনে নেবে না।”
জুলাই সনদ ও ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে
জুলাই সনদ নিয়ে এক প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, “অঙ্গীকারনামার কিছু বিষয় বিএনপির কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। তাই বিএনপি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেবে। আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে। তবে সংবিধানের ঊর্ধ্বে গিয়ে কোনো অঙ্গীকার বা শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে সেটি বিএনপি মেনে নেবে না।”
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গ
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা কোনো জটিলতা চাই না। সবার ঐকমত্যে বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি পুনর্বহাল হওয়ার পর ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সেটি কার্যকর হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।”
বয়কট ইস্যুতে সতর্কবার্তা
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে না—এমন আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, সেটি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা। তবে যারা বাহানা তৈরি করে নির্বাচন বয়কট করবে, তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতির মঞ্চ থেকে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যাবে। দেশের জনগণ কাউকে ছাড় দেবে না।”
সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিএনপি সবসময় জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি দৃঢ়ভাবে আশা প্রকাশ করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন। আর জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।