নির্বাসনশেষে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতা স্থিতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সময়ে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। এবার দীর্ঘ ২০ বছরের নির্বাসনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসছেন।

৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান, যিনি সাধারণভাবে তারেক জিয়া নামে পরিচিত, ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে একাধিক মামলা চলার পর ২০০৪ সালের ঢাকা শহরে শেখ হাসিনার একটি জনসভায় গ্রেনেড হামলায় তার জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে তিনি নিজেকে দোষী স্বীকার করেননি।

গত বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই উত্তাল হয়ে ওঠে। ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর দেশে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়। এই শূন্যতা পূরণের দায়িত্বে আসে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার, যা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়ে দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সময় আওয়ামী লীগের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, এবং শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।

এরপরই তারেক রহমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। গত বছর শেখ হাসিনার উৎখাতের পর তার উপর থাকা সব অভিযোগ থেকে তিনি মুক্তি পান। তিনি বর্তমানে দেশে ফিরে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সময় এসেছে, ইনশাআল্লাহ, আমি শিগগিরই ফিরে আসব। হয়ত কিছু ব্যক্তিগত কারণে এখনও ফিরতে পারিনি। কিন্তু আমার মনে হয়, সময় এসেছে। এটি এমন একটি নির্বাচন, যার জন্য মানুষ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিল। আমি এই সময় নিজেকে দূরে রাখতে পারব না।”

তারেক রহমানের মা, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া, বর্তমানে অসুস্থ এবং এখনও নিশ্চিত নয় তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন কি না। তবে তারেক রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, “যদি তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, তিনি অবশ্যই নির্বাচনে কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।”

দলটির বিশ্বাস, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংসদীয় নির্বাচন তাদের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের সূচনা হতে পারে। দেশটির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত একটি ফলপ্রসূ নির্বাচন হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। দীর্ঘ ২০ বছর পর নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন, ভোট ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। দেশ ও দলীয় রাজনীতিতে তার এই প্রত্যাবর্তন কেমন প্রভাব ফেলবে, তা আগামী নির্বাচনে স্পষ্ট হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *