ন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে চর শ্রীরাম ব্রহ্মপুত্র মন্দির পরিদর্শনে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া।

তথ্য ও প্রতিবেদক- মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী।

বন্দর উপজেলার অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুছাপুর ইউনিয়নের চর শ্রীরাম ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে অবস্থিত ব্রহ্মা মন্দির। বহু পুরাতন হলেও পূর্বে কোন জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে আসেনি। শিল্পনগরীর এই চর এলাকা অনেকটা কম জনবসতিপূর্ণ। সোমবার {২৯ সেপ্টেম্বর } সপ্তমীর সন্ধ্যায় হঠাৎ জেলা মানবতার প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া উপস্থিত হন। মন্দির কমিটি ভক্তবৃন্দ জেলার অভিভাবক কে পেয়ে উচ্ছাসিত হন। সনাতন ধর্মীয় রীতিনুযায়ী জেলা প্রশাসকের স্বাগত জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক মন্দির ঘুরে আলাপচারিতায় খোঁজখবর নেন । তিনি জানতে চান নিরাপত্তা ইসু সহ কোন ধরনের সমস্যা আছে কিনা। শ্রী শ্রী ব্রহ্মা মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী শ্যামল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,”পাকিস্তান আমলে আমাদের এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তুু কখনোই পূর্বে মন্দিরে এভাবে কোন জেলা প্রশাসক আসেনি। এলাকাটি অন্যান্য অঞ্চল থেকে কম জনবসতিপূর্ণ এবং দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আমরা অনেকটা উপেক্ষিত ছিলাম।

মহা সপ্তমীর এই দিনে ডিসি স্যার উপস্থিত হওয়ায় আমরা সনাতন ধর্মবলম্বী সম্প্রদায়ের সবাই খুব উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত। তিনি আরো জানান মন্দির পরিদর্শন শেষে পার্শ্ববর্তী আরও তিনটি মন্দির ঘুরে দেখেন এবং আর্থিক সহযোগিতাও প্রদান করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসাহ দিতে আমরা চেষ্টা করছি যতগুলো সম্ভব মন্দির পরিদর্শন করতে। আমরা তাদের পাশে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ

ই দেশ আমার ও আমাদের সবার। আমরা সকলে মিলে কাঙ্খিত এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলব, সেখানে সিস্টেম নিজেই কাজ করবে কেউ সিস্টেমকে কাজ করাবে না। প্রতিটি ধর্ম-বর্ণ গোত্রের মানুষ তাদের নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে বেড়ে উঠবে। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় কাজের অতিরিক্ত চাপ পড়ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যেকোনো অনুষ্ঠান যাতে সুন্দরভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়,সেজন্য আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি। জেলা প্রশাসন সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সেই অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী, বিজিবি,আনসার বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করছে।

সরকারের সব দপ্তর থেকে সব কাজ মনিটর করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন আমি আড়াই হাজার উপজেলা থেকে শুরু করে রুপগঞ্জ এবং আজকে বন্দরের মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছি। আমাদের প্রত্যাশা চেয়েও অনেক সুন্দরভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার সব অনুষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। দেশের সব ধর্মের মানুষ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করছে, এতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি মনে করি প্রতিটি মানুষের প্রতিটি অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব আমার ওপরও বর্তায়।

সেই লক্ষ্যে আমি প্রতিটি কার্যক্রম নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারি চাকরি করি জনগণের অধিকার ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের অধিকার রক্ষা করাই আমাদের কাজ। আমরা টিম গঠন করে পরিকল্পনা মাফিক দায়িত্ব পালন করছি। মানুষ অনেক উদ্দীপনা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা পালন করছে। এটাই আমাদের বাংলাদেশ। আমরা যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করি, বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক যাইদুল ইসলাম মিয়া শ্রী শ্রী রক্ষা দূর্গামন্দির পঞ্চায়েত কমিটি মন্ডপ ও এলাকার পূজা মন্ডব ঘুরে শ্রী শ্রী রক্ষা কালীমন্দির পরিদর্শন করেন। পরে তিনি লাঙ্গলবন্দের রাজঘাট ও মুছাপুর এলাকার পূজা মণ্ডপও ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন কালে তিনি মন্ডপগুলোর সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপন করায় সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়া দর্শনার্থীদের আপ্যায়নে কোন ঘাটতি না থাকে এবং সবাই যেন খুশি মনে পূজা উদযাপন করতে পারেন, সে লক্ষে তিনি রক্ষা কালীমন্দিরকে ১০হাজার টাকা এবং রাজঘাট কে ১০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক নগদ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

জেলা প্রশাসক মন্ডপ গুলোর পরিবেশ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রশংসা করে। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট কানিজ ফারজানা শান্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক {উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা} নাঈমা ইসলাম, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার {ভূমি} বন্দর, সংশ্লিষ্ট এবং পূজা মন্ডপ গুলোর পিন্ট সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *