পাখি ধরতে গিয়ে নিখোঁজ, ৩ দিন পর পুকুরে মিলল মাদরাসা ছাত্রের রক্তাক্ত লাশ, আটক ১ জন

নিজাম উদ্দিন: 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর এক মাদরাসা ছাত্রের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম সাহাদাত হোসেন সজিব (১৪)। সে স্থানীয় কাশিপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এবং কাশিপুর গ্রামের লস্কর বাড়ির মৃত শওকত আলীর ছেলে।

বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বরাগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর গ্রামের রুহুল আমিন ড্রাইবারের পুকুর থেকে পুলিশ সজিবের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ উদ্ধারের পর দুপুরের দিকে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে মো. রনি (১৭) নামের আরেক মাদরাসা ছাত্রকে, যিনি একই মাদরাসার ছাত্র এবং সজিবের বাড়ির আত্মীয় মো. রুবেলের ছেলে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে। নিহতের স্বজনরাও দাবি করেছেন, সজিবকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

কীভাবে নিখোঁজ হলো সজিব?

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে সজিব নিখোঁজ হয়। তার বাড়ির সামনে একটি রিকশা গ্যারেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সজিব ও রনি একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি নৌকায় করে রুহুল আমিন ড্রাইবারের বাড়ির পাশের একটি বাগানে পাখি ধরতে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর ওই ক্যামেরায় আবার দেখা যায়, একজন ছেলে (রনি) ফিরে আসছে, কিন্তু সজিব আর ফিরে আসেনি।

পরিবার সজিবকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালালেও সজিবের কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে বুধবার ভোরে স্থানীয়রা রুহুল আমিন ড্রাইবারের পুকুরে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

মাথায় আঘাত, সন্দেহ বাড়ছে

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, নিহত সজিবের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

ওসি আরও বলেন, “রনি জানিয়েছে তারা দুজন একসঙ্গে পাখি ধরতে গিয়েছিল। রনি গাছে উঠে, আর সজিব নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে রনি একা বাড়ি ফিরে আসে। অথচ সে সজিব নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি কাউকে জানায়নি। এ থেকেই আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।”

পরিবার ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ

নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এলাকায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের আশ্বাস দিলেও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ঘটনাটি হত্যা কি না, তা নিশ্চিত হতে মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *