মোঃ আনজার শাহ:
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ বুধবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহাসিক এই জানাজায় অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন। প্রাথমিকভাবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার আয়োজন করা হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগমের কারণে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হয়।
জানাজায় খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, তিন বাহিনী প্রধান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে তারেক রহমানের কাছে ভারত সরকারের শোকবার্তা হস্তান্তর করেন। এতে খালেদা জিয়ার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সারদার আয়াজ সাদিক ঢাকায় এসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পাকিস্তান হাই কমিশন বাংলাদেশ তাদের ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এই জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ নাগরিক, নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা জানাজায় অংশ নিতে রাজধানীতে সমবেত হন। নারী ও তরুণসহ সব বয়সের মানুষ উপস্থিত হয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যা তার ব্যক্তিত্ব ও দেশের রাজনীতিতে তার অবদানের স্বীকৃতি বহন করে।
এর আগে বুধবার সকাল ৯টার দিকে খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ নেওয়া হয়। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে সাধারণ মানুষ শেষবারের মতো তাকে দেখার সুযোগ পান।
জানাজার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
দাফনকাজে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপি মনোনীত রাজনীতিবিদরা উপস্থিত থাকবেন। দাফনকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দাফনকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও জানানো হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তার অবদান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লাখো মানুষের উপস্থিতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতাদের সমবেদনা মিলিয়ে এই জানাজা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও প্রভাবশালী মুহূর্ত হিসেবে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।