মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী, ব্যুরো চিফ:
দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশার পর অবশেষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সীমারেখা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এবার সদর, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অংশ নাসিকের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে সিটি করপোরেশনের সীমানা ফতুল্লা থেকে বন্দর হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসক সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর, কাশিপুর, এনায়েতনগর, ফতুল্লা ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অংশ এবং কুতুবপুর ইউনিয়নের আংশিক অংশ (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পূর্ণাংশ), সদর উপজেলার কলাগাছিয়া, বন্দর, মুড়াপুর, ধামগড় ও মদনপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অংশ এবং সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের আংশিক অংশ (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণাংশ) নাসিকের আওতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার) টি এম রাহসিন কবির সদর, বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে জানানো হয়— সরকার (সিটি করপোরেশন) সীমানা পরিবর্তন (সম্প্রসারণ ও সংকোচন) বিধিমালা, ২০১৩ অনুযায়ী প্রস্তাবিত এলাকাগুলোর শর্তসমূহ পূরণ হয়েছে কি না তা সরেজমিন পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন তিন কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রস্তাবিত ইউনিয়নগুলোর জনসংখ্যা, অবকাঠামো, নগরায়ন প্রবণতা, নাগরিক সুবিধা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জনমত গ্রহণ, প্রজ্ঞাপন জারি ও প্রশাসনিক অনুমোদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নাসিকের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ হবে এবং জনসংখ্যাও অন্তত দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। নতুন যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোতে সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা— যেমন নিয়মিত ময়লা অপসারণ, সড়ক ও ড্রেন রক্ষণাবেক্ষণ, পানি নিষ্কাশন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ও সম্পত্তি কর ব্যবস্থার আওতা বৃদ্ধি পাবে। এতে স্থানীয় উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশাসনিক সেবায় গতি আসবে।
দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জের এসব ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা মনে করেন, এসব এলাকা এখন কার্যত শহরাঞ্চলে রূপ নিয়েছে, কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত সক্ষমতার কারণে উন্নয়ন ও সেবার ঘাটতি রয়ে গেছে। তাদের দাবি, নাসিকের অংশ হলে এলাকা আধুনিক নাগরিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবে।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু জনপ্রতিনিধি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ইউনিয়ন বিলুপ্ত হলে স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক প্রভাব কমে যেতে পারে। তবে শহর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফতুল্লা, বন্দর ও কাঁচপুর এলাকায় শিল্পায়ন ও দ্রুত নগরায়ন যে মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ালে সঠিক নগর ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে।
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্প্রসারণ বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও নগর পরিকল্পনার দিক থেকে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। ফতুল্লা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত বিস্তৃত নাসিক হবে রাজধানীর নিকটবর্তী একটি বৃহৎ ও আধুনিক শিল্পনগরী, যা যোগাযোগ, বাণিজ্য ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে সারা দেশের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।