ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দেশপ্রেমিক দলকে বিজয়ী করতে হবে: দুদু

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ফেব্রুয়ারির আসন্ন নির্বাচনে দেশপ্রেমিক দলকে নির্বাচিত করতে হবে। তিনি বলেন, “যে দল পরীক্ষিত, যারা মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, যারা স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, স্বাধীনতার পক্ষে লড়েছে—সেই দলই শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।”

রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই সমাবেশে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মুখোমুখি। দেশকে লুটপাট ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে সতর্ক হতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী, যারা গণহত্যা এবং অর্থপাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এদের আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রায় এক বছর আগে যখন শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তখন পার্শ্ববর্তী দেশ ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্ব বুঝতে পেরেছে, বাংলার মানুষ—হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমান—সবাই মিলেমিশে হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক।

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, “সবার রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে এবং আমরা তা অস্বীকার করি না। তবে যারা গণহত্যা করেছে, যারা শিশু ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে, তাদের আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সেই অর্থ দেশে ফিরতে হবে। এরপর জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না।”

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “এই দেশ গণমানুষের দেশ, গরিব মানুষের দেশ, কৃষক ও শ্রমিকের দেশ। জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধান না করা পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেশ সঠিকভাবে চলতে পারবে না। বর্তমানে কোনো বস্তুর দাম স্থিতিশীল নয়, মানুষের আয় ক্রমশ কমছে, চাকরির সুযোগ সীমিত। তাই আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই—অর্থনৈতিক সংস্থান ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করুন, না হলে দেশ পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের চারপাশে ষড়যন্ত্র চলছে। অদৃশ্য শক্তি ও কিছু ধান্দাবাজ সক্রিয়। এই চক্রান্ত রুখতে হলে একটি যোগ্য, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে আগামী নির্বাচনে দেশের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা যায়।”

সমাবেশে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, সাবেক এমপি লিংকন, জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা এককভাবে এবং সংহতভাবে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “আমরা চাই দেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, তাদের রাজনৈতিক অধিকার বুঝুক, দায়িত্বশীলভাবে অংশগ্রহণ করুক। দেশের সংখ্যালঘু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। শুধু একটি দল নয়, সমগ্র জাতি যেন এক হয়ে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসে।”

তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র এবং অনিয়ম, অর্থ পাচার, গণহত্যার ইতিহাস নিয়ে যদি রাজনীতি করা হয়, তা কখনো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই দেশপ্রেমিক দল ও নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের সঠিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।”

সমাবেশ শেষে নেতারা দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *