মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার:
বাপাউবোর মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ: টেন্ডার সিন্ডিকেটে বিদেশে সম্পদের পাহাড় টেন্ডার বাণিজ্য, জরুরি প্রকল্পের নামে নতুন প্রকল্প অনুমোদন, বদলির লেনদেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, নকশা অনুমোদন ও ঘুষ গ্রহণসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মহাপরিচালক (ডিজি) মো. এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুযোগে বাপাউবোতে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এনায়েত উল্লাহ। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়ে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করতেন না। সরকার পরিবর্তনের পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। অভিযোগ রয়েছে, এখনো বাপাউবোতে তার ‘অপ্রতিরোধ্য দাপট’ বজায় রয়েছে।
এমনকি দেশত্যাগী সাবেক সরকারি দলীয় নেতাদের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এনায়েত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি পাবনার আটঘরিয়ায়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, দেশের অন্তত ৭টি নির্দিষ্ট স্থানে তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য শত কোটি টাকারও বেশি।
মোহাম্মদপুরে ৪ কাঠা জমিতে নির্মিত ৩ তলা বাড়ির মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৪.৬২ শতক জমির মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। পূর্বাচলে ৮.২৫ শতক জমির মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। সাভারের আমিনবাজারে ১৬.০৮৭৫ শতক জমির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়ায় ৮১.৫০ শতক জমির মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। আটঘরিয়ার চাঁদভায় ৭৭ শতক জমির মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। পাবনা সদর উপজেলার চর সাহাদিয়ার এলাকায় ৪৪ শতক জমির মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এসব ছাড়াও পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের নামেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ বিনিয়োগেরও প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাপাউবোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে গড়ে ওঠা তার সিন্ডিকেটের নতুন সংস্করণ এখনো সক্রিয়। তাই কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। বেপরোয়া দুর্নীতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে মো. এনায়েত উল্লাহর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।