স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত ছাত্র সমাবেশ শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ মোড়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে একটি ফেসবুক পোস্টে বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সারজিস আলম লিখেছেন, “আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পূর্বঘোষিত সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে বিএনপি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়েই আগামী বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটবে।”
এর আগে বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ করার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পরিবর্তন করে শাহবাগ মোড়ে আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু, সহাবস্থানে বিশ্বাসী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আমরা এনসিপির অনুরোধকে সম্মান জানিয়েই এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ছাত্রদল সভাপতি জানান, গত জুন মাসেই ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ২২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অনুমতির আবেদন করা হয়। পরে ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতিও দেওয়া হয়।
তবে এরপর কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টিও একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়, যা ছাত্রদল প্রথমে গণমাধ্যমে জানতে পারে। পরবর্তীতে এনসিপির পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বারবার অনুরোধ জানানো হলে ছাত্রদল বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
রাকিব বলেন, “সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং বিব্রতকর। শহীদ মিনারে সমাবেশের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কর্মদিবসে জনভোগান্তি এড়ানো এবং একটি ঐতিহাসিক স্থানে ছাত্রজনতার কণ্ঠ তুলে ধরা। তবুও আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে এসে উদারতা এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বার্তাটি খুব পরিষ্কার—আমরা চাই, বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি ইতিবাচক, শান্তিপূর্ণ, নীতিনির্ভর ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসুক। মতভেদ থাকবে, কিন্তু তা যেন সহনশীলতার সীমানায় থাকে। আমরা সংঘাত নয়, সৌহার্দ্য ও সম্মিলিত অগ্রগতির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্ত দেশের বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত। উসকানি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে রাজনৈতিক উদারতা ও পরস্পর শ্রদ্ধার যে বার্তা ছাত্রদল দিয়েছে, তা ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।