স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি এ মুহূর্তে এমন কোনো উত্তাপপূর্ণ পরিস্থিতি চাইছে না, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, দৈনন্দিন জীবন ও সামগ্রিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে দলটির সন্দেহ, কিছু মহল ইস্যু সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপি সব ধরনের পরিস্থিতি সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের লক্ষ্য জনগণের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা এবং দেশের স্বার্থে সঠিক দায়িত্ব পালন করা।
দলের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হিসেবে দেখার দিক থেকে সকল পক্ষকে সহায়তা করবেন। এর আগে দলটি উল্লেখ করেছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও সময়মতো সম্পন্ন করতে তারা প্রস্তুত।
সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ পৃষ্ঠার মতামত দলটি তৈরি করেছে।
বিএনপি জানায়, জুলাই সনদের কিছু ধারা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা সংসদের ওপর নির্ভর করবে। পাশাপাশি বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো ঐকমত্য না হলে সরকারকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও থাকতে পারে। এ ধরনের মতামত রেখেই কমিশনে দলটি চূড়ান্ত মতামত জমা দিতে যাচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের সঙ্গে মিশে তাদের নিরাপত্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের।
এদিকে, রোববার ও সোমবার চারটি ইসলামি দল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি এই কর্মসূচির প্রতি নজর রাখছে। দলীয় একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, তাদের দাবির মধ্যে ভোটে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) রয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষ এখনও ভালোভাবে জানে না। বিএনপিই সবচেয়ে আগে ভোট সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেছে এবং এ বিষয়ে আন্তরিক। তাই ঐকমত্য কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত। দলটি চাইছে জুলাই সনদ দ্রুততম সময়ে কার্যকর হোক এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দলটি উল্লেখ করেছে, গত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন। তাই তারা এই সময়ের বিচারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চলমান ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রমও তা প্রমাণ করছে। বিএনপি মনে করছে, এই মুহূর্তে যে কর্মসূচি মাঠে নেওয়া হচ্ছে, তার প্রকৃত উদ্দেশ্য জনগণ বোঝেন না। তাই দল সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেবে এবং কোনো বিবাদে জড়াবে না। দলের উদ্দেশ্য দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, যা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব হবে।
রাজধানীতে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে রাজপথে কোনো কর্মসূচি নিলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে। যার যে দাবি, তা নির্বাচিত হয়ে পূরণ করার আহ্বান জানান।” তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যত দেরি হবে, দেশ তত বিপদগ্রস্ত হবে। “রাজপথের পর্ব শেষ হয়েছে। এখন জনগণের মালিকানা ফেরানোর সময়। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশে বিভক্তি ও গৃহযুদ্ধের শঙ্কা থাকে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করছে বিএনপি। দল দান-অনুদানের মাধ্যমে নয়, নাগরিককে সক্ষম করে দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি পরিচালনা করবে।”
বিএনপির এই মনোভাব স্পষ্ট করছে যে, তারা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর দৃঢ়ভাবে জোর দিচ্ছে। দলটি রাজনৈতিক উত্তাপ বা হিংসার পরিবর্তে সংলাপ ও আইনি প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।