স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) স্বায়ত্তশাসিত হচ্ছে এবং বিটিভিকে কোনো রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার বানানো হবে না। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মো. মাহফুজ আলম বলেন, বিটিভিতে নতুন করে আরও রিয়েলিটি শো এবং প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান চালু করা হবে, যা ধারাবাহিকভাবে চলবে। তিনি আরও বলেন, “এখন থেকে বিটিভি হবে সবার—সব দলের এবং সব মানুষের। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা দেশের গণমাধ্যমে স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।”
তিনি জানান, ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন বাংলাদেশের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রতীক। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের তরুণদের স্বপ্ন, সৃজনশীলতা এবং প্রতিভাকে সামনে আনার উদ্দেশ্যে এই প্রতিযোগিতা গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশু-কিশোরদের স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়ায় বাছাই করা হয়েছে, যা ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল বা অর্থনৈতিক অবস্থানের কোনও সীমাবদ্ধতা বহন করে না। মাহফুজ আলম বলেন, “এই শিশু-কিশোররা নতুন বাংলাদেশের পতাকা বহন করবে, নিজেদের প্রতিভা ও পরিশ্রম দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হবে।”
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশকে একটি ভাষা, এক সংস্কৃতি এবং এক ঐতিহ্যের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। বহুদিন ধরে আমাদের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সম্পদের পূর্ণ সম্ভাবনা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যারা সাংস্কৃতিক পরিসর থেকে বাদ পড়েছে, তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। যার ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী মনোভাব গেঁড়ে বসেছিল। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোতে সবাই জায়গা করে নিক, জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সংস্কৃতি হবে শক্তি। অন্তর্ভুক্তি, বৈচিত্র্য এবং মানবতার মিলনই হবে আমাদের সভ্যতার মূলমন্ত্র। এই বাংলার অববাহিকায় যে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সম্পদ আছে, সেই মিলনবিন্দুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অনন্য সাংস্কৃতিক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”
মাহফুজ আলম উল্লেখ করেন, নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আসা শিশু-কিশোরদের প্রতিভা, নিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে তুলে ধরেছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের জনগণ নতুনভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আবিষ্কার করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিজয়ীরা তাদের সৃজনশীল যাত্রা অব্যাহত রাখবে, নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে পথে পা রেখেছি, সেই যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। নতুন বাংলাদেশের যাত্রা যেন স্থায়ী হয়, সেজন্য আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে এবং আমাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিটিভি নতুনভাবে জনসাধারণের সেবা দেবে এবং কোনও রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবমুক্ত থাকবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নতুন রিয়েলিটি শো এবং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের শিশু-কিশোররা শুধু বিনোদন পাবেন না, বরং তারা নিজেদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্বগুণ এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। মাহফুজ আলম বলেন, “বাংলাদেশ বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষা এবং বহু ঐতিহ্যের দেশ। আমরা চাই এই বৈচিত্র্যকেই শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি এবং নতুন প্রজন্মকে বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের এক বাস্তব চিত্র প্রদর্শন করতে পারি।”
প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা দেশের নতুন মুখ, যারা শুধু পারফরম্যান্সে নয়, তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং সমাজসেবামূলক মনোভাবের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাহফুজ আলম আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে উঠবে, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিশা দেখাবে। তিনি বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আমাদের প্রত্যাশা, তারা তাদের প্রতিভা দিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করবে এবং নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।”