ভয়ভীতি দিয়ে আর কোনো সরকার টিকতে পারবে না: রিজভী

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক: 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন আর আওয়ামী লীগের হাতে নয়; বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপরই নির্ভর করছে তারা সচল থাকবে নাকি নিষিদ্ধ ঘোষণা পাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যতই নিজেদের রক্ষায় নাটক সাজাক না কেন, অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচার কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের এই মুখপাত্র। এ সময় তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তাবনা নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়, জবাবদিহিমূলক সরকার চায়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে তারা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণ করবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা, সেটি সেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে যারা অপরাধে লিপ্ত, যারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিচার অবশ্যই হবে।”

তিনি বলেন, “আগামী নভেম্বর মাসে গণভোট চাওয়ার প্রস্তাব মামার বাড়ির আবদারের মতো। গণভোট করতে হলে জনগণের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা দরকার। কোন কোন বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হবে, কী ধরনের সংস্কার আনা হবে—সেটি আগে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা মনে করি জাতীয় নির্বাচনের দিনই যদি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে অতিরিক্ত সময় ও খরচ উভয়ই সাশ্রয় হবে। একই দিনে দুটি কার্যক্রম সম্পন্ন করা গেলে প্রশাসনিক দিক থেকেও সুবিধা হবে। তবে গণভোটের প্রশ্নে সরকারের উদ্দেশ্য স্বচ্ছ না হলে জনগণের আস্থা নষ্ট হবে।”

রিজভী বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ মানেই জাতীয় নির্বাচনে বিজয় নয়। কেউ যদি ভেবে নেয়, ছাত্র রাজনীতির সামান্য সাফল্যই জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার প্রতিফলন, সেটা আত্মঘাতী চিন্তা হবে। এ ধরনের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের জন্যও বিপজ্জনক।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে নয়, সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। তাই এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। বরং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলে জনগণের মধ্যে নতুন আস্থা তৈরি হয়েছে।”

বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথেই এগোতে চাই। যেকোনো উসকানিতে আমাদের নেতাকর্মীদের সংযম ও ধৈর্য ধরতে হবে। আইনত ও সাংবিধানিক পথে থেকেই আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতা নয়, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনা।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমাদের দলের অবস্থান পরিষ্কার—দমননীতি, গুম, হত্যা, ভয়ভীতি দিয়ে আর কোনো সরকার টিকতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সময় শেষ, এখন জনগণের সময়। অন্তর্বর্তী সরকারই ঠিক করবে কে বৈধ, কে অবৈধ। দেশের মানুষ চায় একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা, যেখানে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।”

সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনের শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে দলটি। তারা বিশ্বাস করেন, আগামী নির্বাচন ও গণভোট দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *