স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের (এনসিবি) চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ছাব্বীর।
শনিবার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) আয়োজিত মওলানা ভাসানীর কারাবরণ দিবস উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
কাজী ছাব্বীর বলেন, “শাসক ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করাই ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নীতি ও আদর্শ। মওলানা ভাসানীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেক সত্য কথা আজও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইতিহাসকে গোপন করার মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে আড়াল করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন জেনারেল আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর মওলানা ভাসানী দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা সত্ত্বেও মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রায় ৪ বছর ১০ মাস মওলানা ভাসানীকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বন্দি রাখে।
কাজী ছাব্বীর বলেন, “পাকিস্তান শাসকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন মওলানা ভাসানী। স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন মওলানা ভাসানীই। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর অবদান যথাযথভাবে আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজসহ সবারই উচিত মওলানা ভাসানীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পর প্রায় ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন মওলানা ভাসানী। “মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোড়ালো আহ্বান জানাচ্ছি। আগামী ১৭ নভেম্বর তার মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হোক।”
কাজী ছাব্বীর বলেন, “মওলানা ভাসানী কখনো ধর্মের নামে রাজনীতি করেননি। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। চীনপন্থি রাজনীতিক হওয়ায় দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে প্রায় গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। তৎকালীন ভারত সরকার বামপন্থি কোনো নেতাকে হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। তবুও ভারতের অবদানের প্রতি আমরা আজও কৃতজ্ঞ।”
সভায় দলের সভাপতি স্বপন কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহাসচিব মুনসুর রহমান শেখ। বক্তব্য রাখেন এনসিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক মিয়া, সেলিম পারভেজ, কবি সানজিদা রসুল ও কবি সৈয়দ তৌফিক কামাল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকসেদুর রহমান প্রমুখ।
সভায় বক্তারা একমত পোষণ করেন যে, মওলানা ভাসানীর অবদান ও আদর্শ তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করানো জরুরি। রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হলে তা জাতীয় ইতিহাসের সত্যতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।